নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় সম্পর্কে জেনে নিন
নবজাতকের জন্মের পর কিছু সাধারণ শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে একটি হলো জন্ডিস। এটি বেশিরভাগ নবজাতকের মধ্যে দেখা গেলেও অনেক সময় মা–বাবার মনে অনেক দুশ্চিন্তা তৈরি করে । এই আর্টিকেলে নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় সম্পর্কে
জেনে নিন।
এছাড়াও নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেন,নবজাতকের জন্ডিস,নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ,নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কি ও নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় সম্পর্কে জানুন।
এছাড়াও নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেন,নবজাতকের জন্ডিস,নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ,নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কি ও নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় সম্পর্কে জানুন।
ভুমিকাঃ
নবজাতক জন্মের পর নবজাতকের পিতা
মাতার প্রথম
দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো নবজাতকের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এর সুস্থতা নিশ্চিত
করা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক স্বাস্থ্যগুলো প্রথম দিকে স্বাভাবিক মনে
হলেও পরে এটি মারাত্মক থেকে মারাত্মক তর আকার ধারণ করতে পারে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো একটি জন্ডিস। এই আর্টিকেল টি তে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা
করবো নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ,নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয়, নবজাতকের
জন্ডিসসহ নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত।
নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেনঃ
আপনি যদি জানতে চান নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেন তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় ক্লিক
করেছেন। চলুন এখন আমি আপনাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাই -
নবজাতকের চোখ হলুদ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে রক্তে বিলিরুবিন নামক
রাসায়নিক পদার্থ বেড়ে যাওয়া। এই বিলোরবের নামক রাসায়নিক পদার্থটি বেড়ে গেলে
নবজাতকের চোখ হলুদ দেখায়, তবে শুধু চোখই নাই বরং অনেক ক্ষেত্রেই দেহ এবং পেশাবের
রং হলুদ হয়। বিলুরুবিন হলো এক প্রকারে রক্ত কণিকা যা লোহিত কণিকার
অন্তর্ভুক্ত।
আরো পড়ুনঃ
নবজাতক শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন
যখন শরীরে বেশি পরিমাণে লোহিত কণিকার ভাঙ্গন হয় তখন এটি বিলুরুবিনে পরিণত হয়ে
লিভারের জমা হয়ে থাকে এবং এটি প্রেশাব এবং মলের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। নবজাতকের
ক্ষেত্রে তাদের লিভার পুরোপুরি বিকাশ না হওয়ার কারণে বিলুরুবিন এর পরিমাণ বেড়ে
যায় এবং সম্পূর্ণ ধীরগতি হয়ে যায় এর ফলে বাচ্চাদের ত্বক এবং চোখ হলুদ দেখায়।
নবজাতকের চোখ হলুদ হওয়ার কয়েকটি কারণ-
১.প্রাকৃতিক জন্ডিস
এই জন্ডিক সাধারণত বাচ্চার জন্মের প্রথম দিকে এটি হয়ে থাকে। এটি প্রাকৃতিকভাবেই
হয় এবং এটির কোন চিকিৎসা সাধারণত ডাক্তারেরা করে থাকেন না কারণ কয়েক সপ্তাহ পর
পর এটি নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায় এবং এটিতে খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে অনেকের
ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক ধারণ করতে পারে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিত।
২.অকাল জন্ম
কোন বাচ্চা যদি তার টাইম পিরিয়ডের পূর্বে জন্মগ্রহণ করে থাকে অর্থাৎ কম সময়ের
মধ্যে যদি জন্মগ্রহণ করে থাকে তখনই জন্ডিসে দেখা দেয় কারণ তখন তার লিভার
পরিপূর্ণ হয় না। লিভার পরিপূর্ণ হয় না ফলে বিলুরুবিন এর প্রক্রিয়া সম্পন্ন
ধীরগতিতে সম্পন্ন হয় এর জন্য বাচ্চাদের জন্ডিস দেখা দেয়।
৩.মায়ের দুধ জনিত জন্ডিস
কিছু কিছু নবজাতক যখন প্রথমের দিকে মায়ের দুগ্ধ পান করা শুরু করে তখন মায়ের দুধ
পান করার ফলে তার বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তখনই জন্ডিস দেখা দিতে
পারে।
৪.রক্তের সমস্যা
রক্তে যদি অতিরিক্ত লোহিত কণিকার ভাঙ্গন দেখা দেয় তাহলে এই বিলিরুবিনের মাত্রা
বৃদ্ধি পায় এবং এতেও জন্ডিস দেখা দেয়।
এতক্ষণ আমি আপনাকে নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছিলাম
এখন আমি আপনাকে জানাবো নবজাতকের জন্ডিস সম্পর্কে বিস্তারিত।
নবজাতকের জন্ডিসঃ
নবজাতকের জন্ডিস এমন একটি অবস্থা যেখানে শিশুর তো হক শিশুর চোখ শিশুর মাথা থেকে
দেহ এবং শিশুর মত এবং শিশুর মল হলুদ হয়ে যায়।এটি সাধারণত জন্মের কয়েক সপ্তাহের
মধ্যে দেখা দিতে পারে। চলো নবজাতকের জন্ডিস কি এবং কেন হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত
জানে।
নবজাতকের জন্ডিস সাধারণত বিলিরুবিনের বৃদ্ধির ফলে হয়ে থাকে এটি স্বাভাবিকভাবেই
সময় সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায়। এই জন্ডিস সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত।
১. ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস
ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস নবজাতকের সাধারণ একটি জন্ডিস এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার
অংশ হিসাবে দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃব্যাডমিন্টন খেলার প্রয়জনীয় নিয়মাবলি
২.প্যাথলজিকাল জন্ডিস
এটি একটি অন্তর্নিহিত সমস্যাই সাধারণত লিভার স্থানে সমস্যার কারণে অথবা লিভার ছোট
হওয়ার কারণে বিলিরুবিনের পরিমাণ সঠিকভাবে পরিবর্তন হতে পারে না এ কারণেই এই জন্য
একটি দেখা দেয়।
৩.বেস্ট ফিডিং জন্ডিস
ব্রেস্ট ফিডিং জন্ডিস টা হলো মায়ের দুধ পান করার সময় শিশুর বিলিরুবিন এর পরিমাণ
বেড়ে যেতে পারে এবং এই সময় সেই জন্ডিসকে দেখা যেতে পারে।
সাধারণত শিশুদের ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস এমনিতেই ঠিক হয়ে যায় তবে প্যাথলজিকাল
ধরনের দেখা দিলে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চলুন এখন আমি
আপনাকে নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণঃ
নবজাতকের জন্ডিস তাহলে কয়েকটি কারণ ও লক্ষণ প্রকাশ পায়। সে সম্পর্কে আমি এখন
আপনাকে জানাই-
১. ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়াঃ
শিশুর মুখ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে শরীরের সমস্ত অংশ আস্তে আস্তে হলুদ হয়ে যাবে।
২.খাওয়ার প্রতি অনীহাঃ
বাচ্চার প্রথমের দিকে খাওয়ার যে চাহিদা ছিল সেই খাওয়ার আস্তে আস্তে অনিহায়
পরিণত হবে সে কোনভাবেই খেতে চাইবে না।
আরো পড়ুনঃ
পান্তা ভাতের উপকারিতা
৩. চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াঃ
চোখের মনের আশেপাশে যে সাদা অংশটুকু থাকবে এই অংশটুকু একেবারে হলুদ হয়ে যাবে।
৪.খিচুনি হওয়াঃ
গুরুতর জন্ডিস হলে শিশুর শরীরে খিচুনি অনুভব অথবা ছাগল অনুভব করতে দেখা যায়।
৫.প্রসাব ও মলের রং পরিবর্তন হওয়াঃ
শিশুর বা নবজাতকের জন্ডিস হলে প্রসবের রং হলুদ এবং নবজাতকের রং গারো থেকে গারো
হলুদ হতে পারে।
৬. অস্বাভাবিক কান্নাঃ
শিশুর কান্না যখন তীব্র থেকে তীব্রতর এবং অস্বাভাবিক সোনা তখন বুঝতে হবে বাচ্চার
দেশের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
এতক্ষণ আমি আপনাকে নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছিলাম চলুন
এখন আমি আপনাকে জানাবো নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত
নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কিঃ
নবজাতকের জন্ডিস একটি সাধারণত খুব একটি গুরুতর অসুস্থতা নয় কয়েকদিন নিয়মিত
যত্ন নিলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে গুরুতর অবস্থায় চলে
যেতে পারে। চলুন এখন আমি আপনাকে জানাই নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কি।
নবজাতকের গায়ের রং যদি বেশি হলুদ হয়ে যায় এবং চোখের সাদা অংশ যদি বেশি হলুদ
হয়ে যায় অথবা মলমত্র যদি হলুদ হয় তবে সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হল
রেজিস্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যিনি সাধারণত শিশু বিশেষজ্ঞ।
আরো পড়ুনঃনোবেল পুরুস্কার মানে কি ?
চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বিলিরুবিনের মাত্রা চেক করবেন এবং নবজাতকের জন্য
যে পরামর্শ গুলো দিবেন সেগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যদি বিলিরুবিনের পরিমাণ অনেক
বেশি বেশি বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই বাচ্চাকে ফটো থেরাপি দিতে হবে। ফটো থেরাপি হলো
এমন একটি আলোক মাধ্যম যা আলো প্রদান করে থাকে এবং বাচ্চার শরীর থেকে বিলিরুবিন
বের হতে সাহায্যকারী।
শিশুকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট হালকা রোদে রাখতে হবে যাতে করে উজের আলো
থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি তার শরীরের বিলিরুবিন দূর করতে সাহায্য করে। যদি
নবজাতকের জন্ডিস এক সপ্তাহের বেশি হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যদি প্যাথলজিকাল
জন্ডিস এবং এটি হলে খুব ভালোভাবে ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নবজাতকের চিকিৎসা
করা উচিত তাহলে এটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেলে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। চলুন
এখন আমি আপনাকে জানাবো নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় কি?
নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয়ঃ
ডাক্তারের একটা কথা বলে থাকেন মায়ের সচেতনতা শিশুর সুস্থতার হাতিয়ার অথবা মূল
চাবিকাঠি। এর জন্যই নবজাতকের দিকে মায়ের ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। আর্টিকেলের
এই পর্যায়ে আমি আপনাকে নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয় কি এ সম্পর্কে
বিস্তারিত জানাই।
১. মায়ের দুধ খাওয়া জারি রাখতে হবেঃ
নবজাতকের জন্ডিস হলে অবশ্যই মাকে রেগুলার দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে কারণ এই
দুধ খাওয়ানোর ফলে লিভারে জমা হওয়া বিলিরুবিন মল এবং পেশাবের মাধ্যমে বের হয়ে
যাবে।
২. শিশুকে পর্যাপ্ত আলোতে রাখতে হবেঃ
মাকে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে নবজাতককে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোতে রাখা যায়।
নবজাতক কে অন্ধকারে রাখলে শিশু সমস্যা হতে পারে।
৩. শিশুর লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে হবেঃ
শিশুর ত্বক ও চোখের রঙের লক্ষণ গুলো রেগুলার খেয়াল করো নাকি বাড়ছে না কমছে।
এছাড়াও শিশুর অন্য কোন অলক্ষণ যদি অস্বাভাবিক ভাব দেখা দেয় তাহলেও চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে।
৪. মাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম করতে হবেঃ
নবজাতকের মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম করতে হবে কারণ নবজাতক সুস্থ থাকার অন্যতম
একটি দিক হলো মাকে সুস্থ থাকা মা সুস্থ থাকলে নবজাতক সুস্থ থাকবে। মা সুস্থ থাকে
শিশুর অথবা নবজাতকের দেখভাল করলে শিশু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।
৫. শিশুকে পরিষ্কার রাখুনঃ
শিশু অথবা নবজাতককে অবশ্যই পরিষ্কার করে রাখতে হবে সব সময়। তাদের মল ও প্রেশার
যেন শরীরের কোন অংশে লেগে না থাকে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
অবশ্যই নবজাতকের লক্ষণের কোন অস্বাভাবিক ভাব দেখা দিলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে সাথে সাথে।
শেষ কথা
এই আর্টিকেল টি তে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের
করনীয়, নবজাতকের জন্ডিস হলে করনীয় কি, নবজাতকের জন্ডিসের লক্ষণ সম্পর্কে
বিস্তারিত। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ এতক্ষণ
মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url