পান্তা ভাতের উপকারিতা - পান্তা ভাত খেয়ে ভুল করছেন না তো ?
ভাত খাওয়ার
উপকারিতা যেমন
রয়েছে তেমনি রয়েছে পান্তা ভাতের
উপকারিতা। গরমের
সময় সবাই পান্তা ভাত খেতে বেশ ভালো লাগে। তিন বেলা ভাত খেলে কি হয় এটি অনেকেই
জানতে চান। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার সকল প্রশ্নের
উত্তর পেয়ে যাবেন।
প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত সেটি আপনার অবশ্যই জানা প্রয়োজন। ভাত খাওয়ার
উপকারিতা এবং পান্তা ভাতের উপকারিতা এই সব কিছু নিয়ে চলুন আলোচনা করা যাক।
ভূমিকা
পান্তা ভাত বাংলাদেশের মানুষের
গুরুত্বপূর্ণ ও
জনপ্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত। বিশেষত গরমের মৌসুমে এই খাবার টি বাংলাদেশের
গ্রামাঞ্চলের মানুষরা অধিক পরিমাণে খেয়ে থাকে। এই পান্তা ভাতের প্রচলন শুরু
হয়েছে ভাতকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।
সাধারণত গ্রামের মানুষরা রাতে ভাত কে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা গ্রহণ করে
খাদ্য হিসেবে এটাকেই পান্তা ভাত বলা হয়। এই আর্টিকেলটি তে আমি আপনাকে জানাবো
পান্তা ভাতের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
ভাত খাওয়ার উপকারিতা
বাংলাদেশের একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে “মাছে ভাতে বাঙালী”। সাধারণত
বাঙ্গালীদের সবচেয়ে পছন্দের খাবার হল ভাত।আমরা বাঙালিরা সকলেই ভাত খেয়ে থাকি
কিন্তু আমরা অনেকেই ভাত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানি না।
এই ভাতের বহুমুখী ও বহু ধরনের উপকারিতা রয়েছে। আমি আপনাকে এখন ভাত খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। ভাত আমাদের শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
শক্তির উৎস। কারণ ভাতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের শরীরকে শক্তি প্রদান করে
এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা করতে ও বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম করতে সাহায্য
করে।
আরো পড়ুনঃ
প্রেমিকার মন জয় করবেন কিভাবে
ভাত হালকা ও সহজ হওয়ার কারণে এটি আপনার শরীরে সহজে হজম হবে। এটি আপনার
পরিপাকতন্ত্রকে খুব সহজেই হজম করতে সাহায্য করে এবং এটি থেকে থেকে অন্য খাবার হজম
করতেও সাহায্য করে থাকে। এই ভাত পাচন তন্ত্রের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
ভাতে থাকা শর্করা মস্তিষ্কের জন্য অনেক বেশি উপকারী হওয়ার কারণে এটি মস্তিষ্কের
জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। এটি মনোযোগ বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে
সাহায্য করে থাকে। ভাত আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ ভাত খেলে
আমাদের শরীর অনেক
বেশি সময় ধরে তৃপ্ত থাকে যার ফলে বেশি কিছু খাওয়া লাগে না তাতে আমাদের শরীরের
অনেক অংশে ক্ষুধা কম লাগে।
আর ক্ষুধা কম লাগে বলে আমরা খাবার কম খায় এই এতে করে আমাদের শরীরের ওজন ঠিক
থাকে। ভাত আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভাতে থাকা খনির ও
ভিটামিন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ভাতের মধ্য সেরোটোনিন থাকার কারণে ভাত আমাদের মানসিক চাঁপ কমাতে সাহায্য করে। ভাত
আমাদের মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে থাকে। ভাত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের ত্বকের
স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ঠিক থাকে যেমন আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ এর দাঁত ও হাড়ের
পেশী ভাতের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রট করার কারণে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।
এতক্ষণ আমি আপনাকে ভাত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানাচ্ছিলাম। ভাত খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে জানার পরে আমাদের অবশ্যই জানা উচিত প্রতিদিন আপনার কতটুকু ভাত
খাওয়া উচিত। চলুন সে সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত জানাই
প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত
আপনার প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত তা নির্ভর করবে আপনার ওজন আপনার শারীরিক
অবস্থা এবং আপনার বয়সের ওপর। সাধারণত একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের জন্য
প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ ভাত খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ শীতে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি ?
সাধারণত যারা শারীরিক পরিশ্রম করে থাকেন তাদের জন্য ভাতের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি
পেতে পারে। কারণ যেহেতু তারা শারীরিক পরিশ্রম করেন এর জন্য তাদের শরীরের খাবারের
চাহিদাটাও বেশি থাকে তাই তাদের বেশি পরিমাণে ভাত খাওয়া যেতে পারে।
আপনি যদি ওজন কমাতে চান এবং আপনার স্বাস্থ্যর সম্পর্কে যদি আপনি সচেতন হন তাহলে
আপনাকে নিয়মিত প্রয়োজন মোতাবেক ভাত খেতে হবে । এতে আপনার শরীরের কম ক্যালরি
অর্জন হবে এবং আপনার শরীর দীর্ঘ সময় তৃপ্ত থাকবে।
যদি আপনার শরীরের কোন সমস্যা থাকে বা আপনার যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে
আপনাকে ভাতের পরিমাণ কম রেখে ভাতের পাশাপাশি শাকসবজি ইত্যাদি জাতীয় খাবার বেশি
পরিমাণে খেতে হবে।
আর যদি আপনার ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে আপনি লাল বাদামি বর্ণের ভাত খেতে পারেন
এতে অধিক পরিমাণে শর্করা থাকে যার রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। চলুন আপনাকে
এখন জানাই প্রতিদিন আপনার কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত বয়স অনুযায়ী।
- প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এর ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রায় ১.৫-২ কাপ রান্না করা ভাত।
- প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রায় ১-১.৫ কাপ রান্না করা ভাত।
- বৃদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রায় ১ কাপ রান্না করা ভাত যথেষ্ট।
আমি আপনাকে জানালাম আপনার প্রতিদিন কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত। এখন আমি আপনাকে
জানাবো তিন বেলা ভাত খেলে কি হয়
তিন বেলা ভাত খেলে কি হয়
আপনার মনে যদি প্রশ্ন থেকে থাকে তিন বেলা ভাত খেলে কি হয় তাহলে এই অংশটি আপনি
মনোযোগ সহকারে পড়ুন। ভাত খাওয়ার যেমন কিছু ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে তার সাথে কিছু
নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
ভাত খাওয়ার কিছু ইতিবাচক প্রভাব হলো ভাত আপনাকে হজমে সাহায্য করবে এবং আপনার শরীরকে কম পরিমাণে ভাত খাওয়ার পরেও তৃপ্ত রাখে যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ভাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরকে অনেক পরিমাণে শক্তি যোগান দেয় যাতে আমরা আমাদের কার্যক্রম গুলো সফলভাবে করতে পারি।
ভাত খাওয়ার কিছু ইতিবাচক প্রভাব হলো ভাত আপনাকে হজমে সাহায্য করবে এবং আপনার শরীরকে কম পরিমাণে ভাত খাওয়ার পরেও তৃপ্ত রাখে যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ভাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরকে অনেক পরিমাণে শক্তি যোগান দেয় যাতে আমরা আমাদের কার্যক্রম গুলো সফলভাবে করতে পারি।
তিন বেলা ভাত খেলে কি হয় তার কিছু নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আপনাকে
জানাই, তিন বেলা ভাত খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা আপনার
শরীরকে ডায়াবেটিসের দিকে ঠেলে দিবে। আবার তিন বেলা ভাত খেলে আপনার শরীরের
ক্যালরির পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে যা আপনার শরীরকে অনেক ফ্যাটি এবং চর্বি
যুক্ত করে দেবে।
তিন বেলা শুধুমাত্র ভাত খেলে আপনার শরীরের অন্যান্য পুষ্টিগুণ যেমন মিনারেল আমিষ ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে না পাওয়ার ফলে আপনার শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
আরেকটিতে সমস্যা হতে পারে আপনার সেটি বর্তমানে অনেক বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি তা হল
অধিক পরিমাণে ভাত খাওয়ার ফলে আপনার পেট ফাঁপা গ্যাস ইত্যাদি হতে পারে। এই অংশে
আমি আপনাকে জানালাম তিন বেলা ভাত খেলে কি হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত।এখন আমি
আপনাকে জানাবো পান্তা ভাতের উপকারিতা।
পান্তা ভাতের উপকারিতা
পান্তা ভাত বাঙালির অন্যতম জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে একটি। বাঙালিরা কাঁচা মরিচ
পেঁয়াজ লবণ ও পান্তা ভাত পেলে মন তৃপ্তি করে সেটি খেয়ে ফেলে। তবে পান্তা ভাত
খেলেও আপনি হয়তো জানেন না পান্তা ভাতের উপকারিতা সম্পর্কে।
চলুন আর্টিকেলের এই অংশে আমি আপনাকে পান্তা ভাতের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
জানাবো।
পান্তা ভাতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো-
১. শরীরকে সতেজ রাখাঃ বিশেষ করে গরমের দিন যেহুতু পান্তা ভাত বেশি পরিমাণে
খাওয়া হয়। পান্তা ভাতে যেহেতু অনেক পরিমাণে পানি থাকে সেহুত গরমের সময় পান্তা
ভাত শরীরকে অনেক সতেজ রাখে এবং শরীরকেডি হাইড্রেশন থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য
করে।
বিশেষ করে আপনি যদি অনেক রোদে গরমে কৃষি কাজ বা আপনি যদি অনেক রোদের মধ্যে
দৌড়াদৌড়ি করে কাজ করেন বা অনেক খেলাধুলা করেন তবে সেদিন আপনার পান্তা ভাত
খাওয়া উচিত এতে করে আপনার শরীর অনেক সতেজ থাকবে এবং আপনিও ডিহাইড্রেশন থেকে
বাঁচতে পারবেন
২. অ্যানিমিয়া থেকে বাঁচাঃ পান্তা
ভাতের উপকারিতা এর মধ্যে অন্যতম হলো পান্তা ভাত আমাদের শরীরকে অ্যানিমিয়া থেকে
রক্ষা করে। পান্তা ভাতে আয়রন থাকে যা আমাদের হিমোগ্লোবিনের সাথে মিশে আমাদের
শরীরকে অ্যানিমিয়া হতে প্রতিরোধ করে।
৩.হজমে সহায়কঃ পান্তা ভাতে প্রোবায়োটিক থাকার কারণে এটি সহজেই আমাদের পাচক তন্তের মাধ্যমে দ্রুত হজম হয়ে যায়। আর এই প্রোবায়োটিক আমাদের পরিপাক তন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। এটি হজমের প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
৪. ভিটামিনের উৎসঃ পান্তা ভাত হতে পারে আপনার জন্যে ভিটামিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।পান্তা ভাতের উপকারিতা বর্ণনা করতে গেলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পান্তা ভাতে ফারমেন্টেশন হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক ভাবে ভিটামিন উৎপন্ন। আপনি নিরামীষী তাদের জন্যে পান্তা ভাত একটি ভালো উৎস হতে পারে ভিটামিনের ।
৫.শক্তির উৎসঃ পান্তা ভাতে অধিক পরিমানে এন্টি অক্সিডেন্ট উৎপন্ন ও কার্বো হাইড্রেট থাকে যা শরিরের শক্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
৬. হাড়ের সাস্থ্য রক্ষা করেঃ পান্তা ভাতে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে পান্তা ভাত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের হাড় দাঁত ইত্যাদি মজবুত ও শক্তিশালী হয়। এছাড়াও পান্তা ভাত আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
পান্তা ভাতের উপকারিতা সম্পর্কে আমি আপনাকে বিস্তারিত জানালাম। কিন্তু পান্তা
ভাতের কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। চলুন আপনাকে সে সম্পর্কে একটু জানাই-
আরো পড়ুনঃ দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম কোনটি সেটি জানুন
সতর্কবার্তাঃ পান্তা ভাত অধিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে
অনেক রকমের অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। পান্তা ভাতে যেহেতু অধিক পরিমাণে পানি থাকে
সে কারণে পান্তা ভাত ঠান্ডা হয। আর পান্তা ভাত ঠান্ডা হওয়ার কারণে জ্বর সর্দি
কাশি ইত্যাদি হতে পারে।
এর জন্য এই বিষয়গুলো আপনাকে একটু খেয়াল রাখতে হবে যদি আপনার এ প্রবলেম গুলো
বেশি থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে পান্তা ভাত এড়িয়ে চলতে হবে।
শেষকথা
এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি প্রতিদিন আপনার কতটুকু ভাত
খাওয়া উচিত এবং আপনার কিভাবে ভাত খাওয়া উচিত এবং পান্তা ভাতের উপকারিতা এবং
পান্তা ভাত খাওয়ার সতর্কবার্তা নিয়ে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনার মনের
সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে পেরেছেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url