দেহের শক্তি বাড়ানোর জন্যে কোন মাছ খাওয়া ভালো ?

শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে চাইলে পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকা গুরুত্বপুর্ণ । মাছ এমন একটি খাদ্য উপাদান যা প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর । দেহের শক্তি বাড়ানোর জন্যে কোন মাছ খাওয়া ভালো এই বিষয়ে এই আর্টিকেল টি তে আমি আপনাকে জানাবো 
দেহের শক্তি বাড়ানোর জন্যে কোন মাছ খাওয়া ভালো ?

 এছাড়া এই আর্টিকেলে আমি আপনাকে আরো জানাবো কোন মাছ খাওয়া ভালোমাছের উপকারিতা ও অপকারিতা,মাছের মাথা খাওয়ার উপকারিতা ও মাছের চামড়ায় কোন ভিটামিন থাকে এই সম্পর্কে আপনার মনে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর ।

ভুমিকা

বাংলাদেশ সাধারণত পরিচিত তার জলজ উপাদানের উপর ভিত্তি করে। এই দেশের নদী নালা খাল বিল হাওর বাওড়ে অসংখ্য প্রজাতির এবং বিভিন্ন ধরনের মাছ কাজ করা হয় এবং মাছ পাওয়া যায়। এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব কোন মাছ খাওয়া ভালো,মাছের মাথা খাওয়ার উপকারিতা, মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা,মাছের চামড়ায় কোন ভিটামিন থাকে ও কোন মাছ খাওয়া ভালো আমাদের শরীরের জন্য সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

কোন মাছ খাওয়া ভালো

কোন মাছ খাওয়া ভালো আপনার জন্য এটা জানার জন্য প্রয়োজন আপনার শরীরের কি পুষ্টি গুণের চাহিদার অভাব রয়েছে সে সম্পর্কে। কারণ সাধারণত আপনার শরীরের উপর ভিত্তি করে আপনার জন্য নির্ধারিত মাছটি খাওয়া উপকারী হবে।

 এমনিতে সাধারণত যে কোন মাছ খেলেই আপনি উপকারীতা পাবেন তবে আপনার শরীর কন্ডিশন অনুযায়ী যদি আপনি মাছ গ্রহণ করেন তাহলে সেটি আরো উত্তম হবে। চলুন আপনার জন্য কোন মাছ খাওয়া ভালো হবে সেটি এখন আমি আপনাকে জানাই।

 আপনার যদি চোখ ভালো রাখতে চান বা চোখের কোন সমস্যা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে আপনি ছোটমা সহ রুই মাছ খেতে পারেন কারণ এই মাছগুলো চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং চোখকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। যদি আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন হার খুব কম থাকে তাহলে আপনি ইলিশ মাছ খেতে পারেন এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে সকলের ক্ষেত্রে। 
আপনার যদি হজমে কোন ধরনের সমস্যা হয় এবং আপনার ওজন যদি কমবেশি হয় এর জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ও হজম প্রক্রিয়ার সহজ করার জন্য আপনি কাতলা মাছ খেতে পারেন। এছাড়াও রক্ত স্বল্পতা দূর করতে ও হাড় শক্ত করতে পাঙ্গাস মাছের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এর জন্য আপনি পাঙ্গাস মাছ খেতে পারেন।

 এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ রয়েছে যেমন টুনা মাছ স্যামন মাছ ইত্যাদি ধরনের মাছ আপনার হার্টকে সুস্থ রাখবে কোলেস্টেরল কে নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এতক্ষণ আমি আপনাকে কোন মাছ খাওয়া ভালো সম্পর্কে জানাচ্ছিলাম একটু পরেই আমি আপনাকে জানাবো মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা।

মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রতিটা জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তার সাথে কিছু উপকারিতা রয়েছে। মাছ ও এর ব্যতিক্রম নয়। মাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার হলেও এর কিছু উপকারিতা এর সাথে কিছু অপকারিতা রয়েছে। চলুন মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাই-

মাছের উপকারিতা

১. পুষ্টির উৎসঃ মাছ আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে থাকে কারণ এটাতে রয়েছে খনিজ আয়রন ভিটামিন মিনারেলসহ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ প্রায় প্রতিটি মাছেই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরের মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত কার্যকারী। এই ওমেগা থ্রি ফেটে এসে মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে।
মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

৩. চোখের দৃষ্টি বাড়ায়ঃ মাছে অনেক ধরনের ভিটামিন থাকার কারণে এটি আমাদের চোখের মনি কে শক্তিশালী করে এবং আমাদের দৃষ্টি শক্তি প্রখর করে তোলে।
৪. হাড় মজবুতঃ কিছু কিছু না চেয়ে অত্যাধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম ফসফরাস ইত্যাদি পাওয়া যায় যে কারণে এই মাছগুলো অর্থাৎ এই মাছের ভেতরে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আমাদের শরীরের হাড় কে শক্তিশালী করে ও হাড়ের পাশাপাশি আমাদের দাঁতকে অনেক শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে।

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণঃ মাছে সাধারণত প্রোটিন বেশি থাকে এবং ক্যালোরি কম থাকে যার ফলে আমাদের পেট অনেকক্ষণ ভরে থাকে এবং যাদের ওজন অনিয়ন্ত্রণ তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে আসতে সাহায্য করে।

৬. রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ সাধারণত টাকি মাছ কৈ মাছ শিং মাছ ইত্যাদি রোগীর ভালো পথ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই মাছগুলো অধিক পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করে আমাদের শরীরের জন্য আমাদের প্রতিদিন অন্তত একবেলা হলেও এই মাছগুলো আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

একটু পরে আমি আপনাকে মাছের চামড়ায় কোন ভিটামিন থাকে তা সম্পর্কে জানাবো চলুন তার আগে এখন মাছের কয়েকটি অপকারিতা সম্পর্কে জানাই-

মাছের অপকারিতা

১. অতিরিক্ত তেলে ক্ষতিঃ আপনি যখন মাছ খাবেন তখন অতিরিক্ত তেলে মাছ ভেজে খাওয়া যাবেনা বা মাছ রান্না করে খাওয়া যাবে না এতে করে মাছের ভেতরে থাকা তেল এবং আপনার পরবর্তীতে দেওয়া তেল মিথস্ক্রিয়া করে আপনার শরীরের জন্য ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসবে।

২. আধা কাঁচা মাছ না খাওয়াঃ কখনো আধা কাঁচা মাছ খাওয়া যাবে না কারণ আধা কাঁচা মাছ পরিপূর্ণ রান্নার না হলে মাছের ভিতরের বা মাছের উপরের কয়েকটি ব্যাকটেরিয়া থাকে যে ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা যায় না সেই ব্যাকটেরিয়া গুলো আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এর জন্য সম্পূর্ণ রান্না করে মাছ খেতে হবে।

৩. উচ্চ ফ্যাট থাকা মাছগুলো পরিহার করাঃ কিছু মাছ আছে যেমন শিং মাছ মাগুর মাছ কৈ মাছ ইত্যাদিতে উচ্চ পরিমাণে ফ্যাট থাকে এই মাছগুলো দীর্ঘ মেয়াদী সময় ধরে না খাওয়া উত্তম। এ মাছগুলো দীর্ঘ সময় ধরে খেলে আপনার শরীরের ফ্যাট বেড়ে যেতে পারে এবং আপনার শরীরের কার্য ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
৪. এলার্জির সমস্যাঃ আপনার যদি এলার্জি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে মাছ বুঝে শুনে খেতে হবে কারণ কোন মাছে কি ধরনের ভিটামিন থাকে এগুলো আপনাকে জানতে হবে। মাকে অনেক ধরনের এলার্জি থাকে যে গুলো আপনার শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

৫. দূষিত মাছের সমস্যাঃ অনেক সময় অনেক হাওর বা ওর বা অনেক বিলে অনেক পরিমাণে দূষিত পদার্থ থাকে যেগুলো মাছ গুলো গ্রহণ করে সে মাছ গুলো একটু বুঝে শুনে খেতে হবে। এছাড়া এই মাছ গুলো গ্রহণ করলে আপনার শরীরে দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন এখন আমি আপনাকে জানাবো মাছের মাথা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

মাছের মাথা খাওয়ার উপকারিতা

মাছ এমন একটি পুষ্টি সম্পন্ন খাবার। যার প্রতিটা অংশই আমাদের জন্য রয়েছে অধিক পরিমাণে পুষ্টিগুণ। চলুন আর্টিকেলের এই অংশে আমি আপনাদেরকে জানাবো মাছের মাথা খাওয়ার উপকারিতা। বিশেষ করে ছোট মাছ যেগুলো নদীতে পাওয়া যায় অথবা খালে বিলে হাওড়ে বাড়ে পাওয়া যায় এবং এর সাথে ইলিশ মাছের মাথার পুষ্টিগুণ অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।

 মাছের মাথা আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী। মাছের মাথায় থাকে ক্যালসিয়াম আয়রন ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি ধরনের প্রোটিন গুলা মাছের মাথায় থাকে। যেহেতু মাছের মাথায় ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম থাকে এর কারণে মাছের মাথা হাড় মজবুত করতে ও দাঁত শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

 মাছের মাথায় অত্যাধিক পরিমাণে আয়রন থাকে যা আমাদের শরীরের রক্তের হিমো গ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় বাড়ায় এবং আমাদের শরীরের রক্ত শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। মাছের মাথায় থাকে ঘিলু অর্থাৎ মগজ আরে মগজেই থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড এবং প্রোটিন আমাদের ত্বক কে উজ্জ্বল করতে এবং চুল কে বড় ও চক চকে করতে সাহায্য করে।

 মাছের মাথা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে এবং আমাদের মেজাজ কি ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এতক্ষণ আমি আপনাদেরকে জানাচ্ছিলাম মাছের মাথা খাওয়ার উপকারিতা চলুন এখন আমি আপনাদের জানাই মাছের চামড়ায় কোন ভিটামিন থাকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত।

মাছের চামড়ায় কোন ভিটামিন থাকে

মাছে ভাতে বাঙালি। শব্দটি আমাদের জন্য অনেক কার্যকারী। মাছের প্রতিটা অংশই আমরা গ্রহণ করে থাকি। এবং মাছের প্রতিটা অংশ আমাদের জন্য কোন না কোন ভিটামিন ও পুষ্টি গুণ সম্পন্ন। চলুন এখন আমি আপনাকে জানাই মাছের চামড়ায় কোন ভিটামিন থাকে-
মাছের চামড়ায় ভিটামিন এই ও ভিটামিন ডি এই দুটি ভিটামিন দেখতে পাওয়া যায়। মাছের চামড়ায় প্রচুর ভিটামিন ডি থাকে, যা শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মানুষের শরীরের ইমিউন সিস্টেম কে সুস্থ রাখে। 
মাছের চামড়ায় কোন ভিটামিন থাকে

ভিটামিন ডি শরীরের হাড়ের কার্যকারিতা রক্ষা করে এবং হাড় ক্ষয়রোধ থেকে আমাদেরকে সুস্থ রাখে। ভিটামিন ই একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের সুস্থতা রক্ষা করে। এছাড়াও ভিটামিন এ ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং চুলকে করে চকচকে কালো এবং ঘন।

শেষ কথা 

এই আর্টিকেল টি তে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি কোন মাছ খাওয়া ভালো,মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা,মাছের মাথা খাওয়ার উপকারিতা,মাছের চামড়ায় কোন ভিটামিন থাকে এ সকল তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url