শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ । যা বাংলাদেশে বর্তমান মহামারির রুপ নিয়েছে । বিশেষ করে শিশুদের জন্যে এই রোগ টি বেশি ক্ষতিকর হয় । এই আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ে জেনে নিন আপনার অথবা আপনার বাচ্চার ডেঙ্গু হয়েছ কি না? 
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

এছাড়াও জানুন ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ,ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার,শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত

ভূমিকা

ডেঙ্গু এমন একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ যা বর্তমান সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে। বর্ষাকাল ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবৃদ্ধি করার উপযুক্ত সময়। ডেঙ্গু জ্বর খুবই মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী একটি রোগ। বর্ষাকালে এডিস মশা তার বংশ বৃদ্ধি করার পরিবেশ পায় যার ফলে বর্ষাকালে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। 

এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানাবো ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ,ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার,শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত। এই আর্টিকেল এর প্রথম অংশে আমি আপনাকে জানাবো ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

ডেঙ্গু রোগ এমন একটি রোগ এটি আক্রান্ত হলে এর লক্ষণ সাধারণত চার থেকে পাঁচদিন পরে প্রকাশ পায়। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ এমন ভাবে প্রকাশ পায় প্রথমে কিছু হালকা পাতলা প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় পরে গুরুতরভাবে লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আর্টিকেলের এই অংশে আমি আপনাকে জানাবো ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে।

১। প্রাথমিক লক্ষণঃ ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণ হলো আপনার শরীরের জ্বর থাকবে। এবং আপনি যদি দেখেন আপনার শরীরে তাপমাত্রা ১০৪° ফারেনহাইটে পৌঁছে গেছে তাহলে আপনার ডেঙ্গু রোগ হতে পারে। 
ডেঙ্গু রোগের আরো কিছু প্রাথমিক লক্ষণ যেমন আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা ও গাঁটের ব্যথাও হতে পারে। এইসব ব্যথার কারণে ডেঙ্গু রোগকে ব্রেকবোন ফিবার ও বলা হয়ে থাকে। 

আরো একটি প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা গায়ের ৱ্যাশ-ফুসকুড়ি হওয়া। এইগুলো হলো ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। এর জন্য আপনি ডাক্তারের পরামর্শ বা সামান্য কিছু টেস্ট করিয়ে নিতে পারেন।

২। গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণঃ আপনি যখন দেখবেন আপনার নাক বা মাড়ি দিয়ে হালকা রক্ত বের হচ্ছে এগুলো গুরুতর ডেঙ্গুর লক্ষণ। গুরুতর ডেঙ্গুর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যেমন আপনার বমির সাথে রক্ত আসতে পারে এবং বমি বারবার হতে পারে এবং আপনার মলের সাথেও রক্ত আসতে পারে। 

এমনও হতে পারে আপনি চোখে ঝাপসা দেখতে পারেন এবং অজ্ঞান হয়েও যেতে পারেন। এগুলো যদি আপনার শরীরে দেখা দেয় তাহলে আপনার উচিত দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং হসপিটালে যাওয়া।

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত। এ আর্টিকেল এর পরের অংশে আমি আপনাকে জানাবো ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার।

ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগের এন্টিভাইরাল ওষুধ এখনো তৈরি হয়নি এবং ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। তবে কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে একটি প্রশমন করা সম্ভব হতে পারে। যেমন রোগীর শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে বা রোগীর জ্বর নিয়ন্ত্রণ করে। আর্টিকেলের এই অংশে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।

১। জ্বর কমানোর ওষুধঃ আপনি যদি আপনার ডেঙ্গুর প্রতিকার করতে চান।তাহলে আপনার শরীরের জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

এর জন্য জ্বর কমানোর ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। এসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। কারণ এসপিরিন জাতীয় ওষুধ রক্ত পাতলা করতে সহায়তা করে যার ফলে আপনার রক্তপাত বৃদ্ধি হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার

২। পানি শূন্যতা দূরঃ পানি শূন্যতা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ আপনার শরীরে যদি পানি শূন্যতা দেখা দেয় তাহলে আপনার শরীরে আরো ডেঙ্গু পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
তাই আপনার প্রচুর পরিমাণে স্যালাইন, ফলের রস এবং পানি খাওয়া উচিত। আপনার শরীরে যেন পানি শূন্যতা না দেখা দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তার সাথে আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।

৩। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াঃ উপরের প্রাথমিক চিকিৎসা গুলো করেও যদি আপনার জ্বর না কমে তাহলে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

ডেঙ্গু রোগের আরও গুরুতর সমস্যা যেমন আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্তপাত যেমন বমির সাথে, মলের সাথে, নাক ও কান দিয়ে রক্ত আসে সে ক্ষেত্রে আপনার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাওয়া জরুরী। এবং আপনার শরীরে রক্ত প্লাটিলেট কাউন্ট নিয়মিত পরীক্ষা করাও উচিত।

৪। যে কাজগুলো করবেন নাঃ আপনার শরীরে যদি ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে আপনার যে কাজগুলো করা উচিত না তা হলো-

অ্যাসপিরিন বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়া। নিজে থেকে কোনরকম বেশি পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া এবং রক্তপাত বা ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ এড়িয়ে যাওয়া।
এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।এর পরবর্তী অংশে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।

শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার 

যেহেতু শিশুরা তাদের লক্ষণগুলো বোঝাতে পারেনা সেহেতু শিশুদের লক্ষণ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে জানার চেষ্টা করতে হতে পারে। বড়দের তুলনায় শিশুদের লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে। আর্টিকেলের এই অংশে আমি আপনাকে জানাবো শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।

১। বমি বমি ভাবঃ আপনার বাচ্চা আপনি যদি দেখেন কিছু খেতে চাচ্ছেনা এবং বমি করছে বা বমি বমি ভাব হচ্ছে তাহলে আপনার বাচ্চার ডেঙ্গু রোগ হতে পারে।

২। জ্বরঃ আপনার বাচ্চার শরীরে অনেক বেশি পরিমাণে জ্বর যেমন ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইটের মধ্যে হয় এবং তার সাথে বমি বমি ভাব রয়েছে এবং দেখবেন আপনার বাচ্চা অতিরিক্ত বিরক্তি অনুভাব করতে পারে এবং অতিরিক্ত কাঁদতে পারে তাহলে আপনার বাচ্চা ডেঙ্গু রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৩। ত্বকের ৱ্যাশঃ আপনার বাচ্চা যদি ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে তাহলে আপনার বাচ্চার শরীরে ৱ্যাশ এবং ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এবং আপনার বাচ্চার পেট ব্যথা বা পেট ফুলেও যেতে পারে।
৪। অতিরিক্ত লক্ষণঃ আপনার বাচ্চার যদি ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে তার কিছু অতিরিক্ত লক্ষণ হলো ঘন ঘন ঘুমিয়ে পড়া, ক্ষুধামান্দা,চোখ লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এবং গুরুতর ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে আপনার বাচ্চার নাক বা মাড়ি দিয়ে রক্ত ও পড়তে পারে।

প্রথমেই আমি আপনাকে জানালাম শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ সম্পর্কে। এখন আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব শিশুর ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার সম্পর্কে। নিচে শিশুর ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার দেওয়া হল -
শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

১। জ্বর কমানোর চেষ্টা করুনঃ আপনার শিশুর যদি অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগ হয়ে থাকে তাহলে আপনার শিশুর যত সম্ভব পারা যায় জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে থাকা। 

আপনি আপনার বাচ্চাকে অতিরিক্ত ওষুধ না দিয়ে স্বাভাবিক কোন উপায়ে যদি জ্বর কমানো যায় সেইটা ব্যবহার করতে হবে যেমন পানি দিয়ে পট্টি দেওয়া। ওষুধের পরিবর্তে এসব স্বাভাবিক উপায়ে আপনার বাচ্চার শরীরের জ্বর কমালে আপনার বাচ্চা অনেক টা আরাম পেতে পারে।

২। তরল খাবার দিনঃ আপনি আপনার বাচ্চাকে যত তরল খাবার দিবেন তা আপনার বাচ্চার শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। আপনি আপনার বাচ্চাকে ফলের রস, স্যুপ, ডাবের পানি এবং ওআরএস স্যালাইন দিন।

৩। রক্ত পরীক্ষা করানঃ বাসার প্রাথমিক উপায়েও যদি আপনার বাচ্চা শরীরের জ্বর না কমে বা আপনার বাচ্চার শরীর এখনো অসুস্থতা থাকে। তাহলে আপনার উচিত আপনার বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া এবং রক্ত পরীক্ষা করা। আপনি আপনার বাচ্চার হেমাটোক্রিট ও প্লেটলেট কাউন্ট নিয়মিত পরিক্ষা করান। আর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেন।

৪।যে কারণে হাসপাতালে ভর্তি করবেনঃ আপনার বাচ্চার যদি এই লক্ষণ গুলো দেখা দেয় যেমন পেটের তীব্র ব্যথা, মারি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া,ঘন ঘন বমি করা, প্রসব বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ঘুমিয়ে পড়া বা সাড়া না দেওয়া তাহলে আপনার বাচ্চাকে মেডিকেলে ভর্তি করান।এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।

শেষ কথা

এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে যা যা জানিয়েছি তা হল ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ,ডেঙ্গু রোগ প্রতিকার,শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত।

আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি আপনার মনের ভেতরে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এইরকম তথ্যসম্বলিত ও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

ads top