লিভার জন্ডিস কতটা মারাত্নক ? জেনে নিন লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি কি

লিভার জন্ডিস কতটা মারাত্নক ? জেনে নিন লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি কি এই আর্টিকেল টি সম্পুর্ন পড়লে জানতে পারবেন
লিভার জন্ডিস কতটা মারাত্নক ? জেনে নিন লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি কি

 
এছাড়াও জন্ডিস কেন হয়,জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার, জন্ডিস হলে কি খাবার খাওয়া উচিত ও লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি বিষয় গুলা সব জানতে পারবেন । 

ভুমিকা

জন্ডিস বাংলাদেশ খুব পরিচিত একটি অসুখের নাম। এটি এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যারা প্রধানত লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে দেয়। জন্ডিস হলে শরীরের অনেক রকমের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এটি শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধ সকল বয়সী মানুষদের হতে পারে।

 চলুন এই আর্টিকেল টি তে আমি আপনাকে জন্ডিস কেন হয়, জন্ডিস, এর লক্ষণ ও প্রতিকার, জন্ডিস হলে কি খাবার খাওয়া উচিত ও লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি কি এই সকল তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাই।

জন্ডিস কেন হয়

আপনার মনের মধ্যে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতেই পারে যে জন্ডিস কেন হয়। চলুন এ সম্পর্কে আমি আপনাকে এখন জানাই-জন্ডিস মূলত লিভারের সমস্যা এর কারণে দেখা দেয়। এছাড়াও রক্তে বিলের অভিনয়ের পরিমাণ যদি বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে।

 আমাদের রক্তের একটি রাসায়নিক পদার্থ হল লোহিত রক্ত কণিকা বা (RBC), তবে এটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর ভেঙে যায়। কিন্তু যখন এ লোহিত রক্ত কণিকা ভাঙ্গার পরিমাণ বেড়ে যায় তখন লোহিত রক্ত কণিকা থেকে বিলিরুবিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যা থেকে আমাদের জন্ডিস দেখা দিতে পারে। এমনি সাধারণ পর্যায়ে বা স্বাভাবিক পর্যায়ে বিলিরুবিন মলমত্রের সাহায্যে বের হয়ে যায়।
 কিন্তু বাধাগত অবস্থায় যখন এটি বাধা প্রাপ্ত হয় তখন এটি শরীরের রক্তের সাথে মিশে জন্ডিসের পরিণত হয়। ছাড়াও হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস লিভারের কোন কার্যক্ষমতা কমে গেলে অথবা লিভার আঘাত প্রাপ্ত হলে বা লিভারে কোন দাগ পড়লে জন্ডিস দেখা দেয়। 

অনেক ক্ষেত্রে নবজাতকের জন্মের পর থেকে জন্ডিস দেখা যায় কারণ অনেক নবজাতকের লিভার সম্পূর্ণ পরিপক্ক হয় না এর কারণে এগুলো হয়তো রক্ত কণিকা ভেঙ্গে যেতে না পেরে অধিক পরিমাণে বিলিরুবিন উৎপন্ন হয়। রক্তের লোহিত কণিকা যখন উৎপন্ন থেকে ভেঙে যায় খুব তাড়াতাড়ি তখন বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং জন্ডিস দেখা দেয়। 

এছাড়াও পিত্তথলিতে পাথর হলে অথবা পিত্তথলি কোন কারনে আঘাতপ্রাপ্ত হলে যদি বিলিরুবিন যদি বের হতে না পারে সে ক্ষেত্রে জন্ডিস দেখা দেয়। এতক্ষণ আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম জন্ডিস কেন হয় চলুন এখন আমি আপনাকে জানাই জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।

জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার

জন্ডিস আসলে এক প্রকার উপসর্গ। যা লিভার এর ভবিষ্যত মারাত্মক রোগ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। চলুন এখন আমি আপনাকে জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানাই-

১. সমস্ত ত্বক হলুদ হয়ে যাবে।
২. চোখের সাদা অংশ হলুদাভ ভাব দেখা দিবে।
৩. অতিরিক্ত হলুদ রঙের পেশাব হবে
৪. মল ফ্যাকাসে ধরনের হবে

৫. খাওয়ার প্রতি অনীহা জাগবে
৬. প্রচুর পরিমাণে বমি বমি ভাব লাগবে
৭. পেটে অনেক বেশি ব্যথা হয়।
৮.কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক সময় বমিও হবে

৯. লিভারের অংশ পেটে ওই জায়গায় অস্বস্তি বোধ হবে।
১০. সংক্রামণজনিত হয় তাহলে খুব জ্বর আসবে।
১১. এবং ত্বকে চুলকানি হবে।

এতক্ষণ জন্ডিস এর লক্ষণ চলুন এখন আমি জানাই আপনাকে জন্ডিস এর প্রতিকার কিভাবে করবেন।
জন্ডিসের প্রতিকার সাধারণত জন্ডিসের উপর নির্ভর করে। আসলে যে ধরনের জন্ডিস হয় সে ধরনের চিকিৎসা করতে হয়। তবে জন্ডিসের সর্বোত্তম চিকিৎসা হচ্ছে সব সময় রেষ্ট করা। যদি জন্ডিস বোঝা যায় তাহলে অবশ্যই সর্বপ্রথম রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডাক্তার যে সকল নির্দেশনা দিবেন এবং যে সকল ওষুধ দিবেন সেই ওষুধ গুলো গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও ডায়েট জীবনে পরিবর্তন আসতে হবে। অত্যাধিক পরিমাণে পানি খেতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে পানের পরিমাণ এবারের বেশি খাওয়া যাবেনা অল্প অল্প করে পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং দিনে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি খেতে হবে।
জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার


লিভারের কার্য ক্ষমতা ফিরে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুণ সম্পন্ন খাবার খেতে হবে যেমন শাকসবজি, কই মাছ, শিং মাছ এছাড়াও ফলমুল যেগুলোতে বেশি পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন থাকবে সেগুলো বেশি পরিমাণে খেতে হবে। 

অবশ্যই অ্যালকোহল জাতীয় জিনিস পরিত্যাগ করতে হবে। নবজাতকের যদি জন্ডিস হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারি চিকিৎসার মাধ্যমে আলো থেরাপি বা পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোতে বাচ্চাকে রাখতে হবে দৈনিক। এবং প্রতি এক সপ্তাহ পর পর লিভার ফাংশন টেস্ট করে দেখতে হবে জন্ডিসের কতটুকু উন্নতি বা অবনতি হয়েছে। 

যদি উন্নতি না হয় অবনীতির দিকে যায় তাহলে সাথে সাথে আপনার রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। এতক্ষণ আমি আপনাকে জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছিলাম চলুন এখন আমি আপনাকে জানাবো জন্ডিস হলে কি খাবার খাওয়া উচিত।

জন্ডিস হলে কি খাবার খাওয়া উচিত

জন্ডিস হলে স্বাভাবিক নিয়মে খাবার খাওয়া থেকে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ যেহেতু এটা লিভারের সমস্যা আমাদের লিভার সব ধরনের খাবার অসুস্থ অবস্থায় পরিপাক করতে পারে না। এর জন্যই চলুন আর্টিকেলের এই অংশে আমি আপনাকে জানাবো জন্ডিস হলে কি খাবার খাওয়া উচিত এবং কি কি খাবার পরিপাক করা উচিত। জন্ডিস হলে খাদ্য অভ্যাসের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত।

পানিঃ জন্ডিসের সময় অত্যাধিক পরিমাণে পানি খেতে হবে কারণ পানি শরীরের অতিরিক্ত বিলিরুবিন এবং অতিরিক্ত টক্সিন পদার্থগুলো প্রসাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।

ডাবের পানিঃ ডাবের পানিতে হালকা পরিমাণে ভিটামিন আছে এবং এটি একজন রোগীর জন্য একটি ভালো পথ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। এর জন্য প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডাব খেতে হবে।

শাকসবজিঃ জন্ডিস হলে অনেক পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে যেমন সবুজ শাক লাল শাক বথিয়া শাক ইত্যাদি শাকের সাথে লাউ, পেঁপের তরকারি ফুল কপি বাঁধা কপি ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে।

প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ফলের রস খেতে হবেঃ বিশেষ করে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি তোর ফলের রস বলতে বোঝায় বাসায় তৈরি কৃত কমলার রস মাল্টার রস, আপেলের রস, পেঁপের রস ব্লেন্ডার করে বা যে কোন ভাবে রস করে ওকে কি খাওয়াতে হবে।

ফলমুলঃ এমনি সাধারণ ফল খেতে গেলে ফলের মধ্যে রাখতে হবে আপেল কমলা মাল্টা আঙুর পেপে তরমুজ ইত্যাদি।

লেবুঃ পানিতে মিশিয়ে নেব শরবত খাওয়াও একটি জন্ডিসের রোগীর জন্য অনেক উপকারী ।
এছাড়া জন্ডিসের রোগীর জন্য যে ভাত বা যে খিচুড়ি রান্না করা হবে সেটি একদমই নরম করতে হবে। কারণ লিভার এই সময় কঠিন টাইপের খাদ্য পরিপাক করতে সাহায্য করতে পারে না এর জন্যই নরম টাইপের খাদ্য যা লিভারের জন্য সহজপাচ্য হবে এ ধরনের খাবার খেতে হবে। একটু পরে আমি আপনাকে জানাবো লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি কিন্তু তার আগে চলুন আপনাকে জানায় কি কি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

চর্বিযুক্ত খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না, ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া যাবে না, বাজারে পাওয়া যাওয়া প্যাকেট খাদ্য খাওয়া যাবেনা বাজারে পাওয়া যায় এমন বোতল জাত কোনো কার্বনেট ড্রিঙ্ক খাওয়া যাবেনা । অ্যালকোহল খাইলে অ্যালকোহল একদম পরিত্যাগ করতে হবে। বেশি মসলাযুক্ত খাবার বা ফাস্টফুড খাওয়া যাবেনা। অতিরিক্ত ঝাল অতিরিক্ত লবণ এবং অতিরিক্ত চিনি পরিহার করতে হবে।

এতক্ষণ আমি আপনাকে জন্ডিস হলে কি খাবার খাওয়া উচিত এবং কি কি খাওয়ার খাওয়া উচিত না সে সম্পর্কে জানাচ্ছিলাম চলুন এখন আমি আপনাকে জানাবো লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি কি।

লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি

লিভার জন্ডিস অনেক কারণে হয়ে থাকে।বলুন এখন আমি আপনাকে লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি কি তা জানাই। লিভার জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ হলো রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ত্বক, চোখ, এবং মিউকাস ঝিল্লির হলুদ বর্ণ ধারণ। তবে এর পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা মূলত লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাস বা লিভার জনিত সমস্যার সাথে সম্পর্কিত।
 এছাড়াও লিখার জন্ডিস হলে খাওয়াতে ওরতই দেখা দেয় এবং শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ চলে আসে। অনেকের ডিপার জন্যে খেলে জ্বর চলে আসে এবং লিভারের জায়গাটা ফুলে যায়। আস্তে আস্তে লিভার জন্ডিসহ রোগীর ওজন ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। কোন খাবারই সে গ্রহণ করতে পারে না যে কোন খাবার খাওয়ার পরে সে খাবারটি বমির মাধ্যমে বের হয়ে যাবে।
লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি


উপরের এই লক্ষণ গুলো যদি কোন রোগের দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই সাথে সাথেই চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে এবং লিভার বিশেষজ্ঞ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে রোগীকে দেখাতে হবে।

শেষকথা 

এই আর্টিকেল টি তে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি লিভার জন্ডিসের লক্ষণ কি,জন্ডিস হলে কি খাবার খাওয়া উচিত,জন্ডিস কেন হয় ও জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url