আউটসোর্সিং কাকে বলে - আউটসোর্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা
বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় চাকরির সংখ্যা অনেক কম । যার ফলে বাংলাদেশের বেশির
ভাগ ছেলে ও মেয়ে বেকারত্বের সমস্যা ভুগছে । আপনিও যদি বেকারত্বে ভুগেন তাহলে এই
আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ে আউটসোর্সিং কি এবং আউটসোর্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো জেনে আপনিও আউট সোর্সিং করতে পারেন ।
এই আর্টিকেল টি পড়লে আরো জানতে পারবেন আউটসোর্সিং কাকে বলে,আউটসোর্সিং এর কাজ
গুলো কি কি,একটি কোম্পানি কেন আউটসোর্সিং করে,আউটসোর্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা
সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন ও তার পরিসর বদলে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে
প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি। আউটসোর্সিং হচ্ছে কোন প্রতিষ্ঠান তার কিছু
কাজ অন্য তৃতীয় কোন পক্ষকে দিয়ে করিয়ে নেয়। এই আর্টিকেলটি তে আমি আপনাকে
জানাবো আউটসোর্সিং কাকে বলে,আউটসোর্সিং এর কাজ গুলো কি কি,একটি কোম্পানি কেন
আউটসোর্সিং করে,আউটসোর্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত। এ আর্টিকেল
এর প্রথম অংশে আমি আপনাকে যা জানাবো তা হলো আউটসোর্সিং কাকে বলে।
আউটসোর্সিং কাকে বলে
বর্তমান সময়ে আউটসোর্সিং একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
আর্টিকেলের এই অংশে আমি আপনাকে জানাবো আউটসোর্সিং কাকে বলে।
১। পারিভাষিক সজ্ঞাঃ আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কিছু কাজ বা সেবা
অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে দিয়ে করিয়ে নেন। তাহলে এটি আপনার কোম্পানির
আউটসোর্সিং। আউটসোর্সিং এজন্যই করা হয় যার ফলে আপনি মানসম্পন্ন কাজ পেতে পারেন
এবং এতে আপনার খরচও কম হতে পারে। আউটসোর্সিং এর কিছু কাজ আপনি অভ্যন্তরীণ ভাবে
করার পরিবর্তে বাইরের উৎস থেকে করাতে পারেন ।
আরো পড়ুনঃ
ফ্রিল্যান্সিং শিখার গুরুত্বপুর্ন টিপস
২। উদাহরণস্বরূপঃ আপনি যদি আউটসোর্সিং কাকে বলে উদাহরণস্বরূপ জানতে চান তাহলে এটি
আপনার জন্য, এমন অনেক বিদেশী কোম্পানি আছে যারা কাস্টমার সার্ভিস, সফটওয়্যার
ডেভেলপমেন্ট, ডেটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন এই কাজগুলো অন্য কোন দেশের
ফ্রিল্যান্সার বা কোম্পানি দিয়ে করিয়ে নেই। সে ক্ষেত্রে এটি আউটসোর্সিং হতে
পারে।
৩। সংক্ষেপেঃ আপনি আপনার কোম্পানির কাজ অন্য কোন কোম্পানিকে দিয়ে করিয়ে নেওয়ায়
হলো আউটসোর্সিং।
এতক্ষণ আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি আউটসোর্সিং কাকে বলে এই সম্পর্কে
বিস্তারিত। এই আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে আমি আপনাকে জানাবো আউটসোর্সিং এর কাজ গুলো
কি কি।
আউটসোর্সিং এর কাজ গুলো কি কি
আউটসোর্সিং এর অনেক রকম কাজ রয়েছে। আপনি যদি এই আর্টিকেলটিতে আউটসোর্সিং এর কাজ
গুলো কি কি এই সম্পর্কে জানার জন্য এসে থাকেন তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায়
ক্লিক করেছেন। নিচে আউটসোর্সিং এর কিছু কাজ সম্পর্কে জানানো হলো-
১। গ্রাফিক্স ডিজাইনঃ আউটসোর্সিং এর অন্যতম একটি কাজ হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মাধ্যমে আপনি আপনার কোম্পানির লোগো,আপনি আপনার কোম্পানির
ব্যানার, পোস্টার,ভিডিও, এনিমেশন ইত্যাদি তৈরি করতে পারেন ।
২। আইটি বিষয়ক কাজঃ তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক কাজ আপনি করতে পারেন । যেমন, এই
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কাজের মধ্যে রয়েছে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি, ওয়েব ডিজাইন,
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ড্রাইভার সিকিউরিটি সেবা, সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন
ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি।
৩। কনটেন্ট তৈরিঃ আউটসোর্সিং এর আরো একটি কাজ হলো কনটেন্ট তৈরি। এর মাধ্যমে আপনি
আপনার স্ক্রিপ্ট রাইটিং করতে পারেন, আর্টিকেল ও ব্লগ লেখালেখি করতে
পারেন,কপিরাইটিং করতে পারেন এবং প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন করতে পারেন।
৪। ডিজিটাল মার্কেটিংঃ আউটসোর্সিং এর আরো একটি অন্যতম কাজ হল ডিজিটাল মার্কেটিং।
এর মাধ্যমে আপনি আপনার কোম্পানির প্রচার করতে পারেন। এটি আপনি বিভিন্ন মাধ্যমে
করতে পারেন যেমন ইমেইল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং,
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ইত্যাদি।
৫। ডেটা বিষয়ক কাজঃ আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আপনি ডেটা বিষয়ক কাজও করতে পারে।
ডেটা বিষয়ক কাজগুলো হল ওয়েব রিসার্চ, ডেটা ক্লিনিং ও অরগানাইজিং, ভার্চুয়াল
অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি।
এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম আউটসোর্সিং এর কাজ গুলো কি কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত।
এই আর্টিকেলের পরের অংশে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব একটি কোম্পানি কেন
আউটসোর্সিং করে এই সম্পর্কে বিস্তারিত।
একটি কোম্পানি কেন আউটসোর্সিং করে
বিভিন্ন কারণে যে কোন কোম্পানি আউটসোর্সিং করে থাকে। আউটসোর্সিং হতে পারে দক্ষতা
বাড়ানো বা খরচ কমানো প্রতিযোগিতা মূলক ইত্যাদির জন্যেও হতে পারে। আর্টিকেলের এই
অংশে একটি কোম্পানি কেন আউটসোর্সিং করে এই সম্পর্কে জানাবো।
১। সময় বাঁচানোঃ আপনি যদি আপনার কোম্পানিতে আউটসোর্সিং করেন তাহলে আপনি আপনার
কোম্পানিতে মূল ব্যবসায় মনোযোগ দিতে পারবেন এবং এতে আপনার মূল্যবান সময়ও অপচয়
কম হতে পারে। এর ফলে আপনার কোম্পানির উৎপাদনশীলতাও বাড়তে পারে।
আরো পড়ুনঃ
আনসার জিডিপি কাজ কি ?
২। খরচ কমানোঃ আউটসোর্সিং এর একটি বড় কারণ হলো খরচ কমানো। আপনি আউটসোর্সিং এর
মাধ্যমে আপনার কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যয় হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। যার ফলে আপনার
কোম্পানিতে টাকা সাশ্রয় হতে পারে এবং আপনার কোম্পানি উন্নতি হতে পারে।
৩। ফোকাস বৃদ্ধিঃ কোম্পানির বিভিন্ন কম মূল্যবান কাজ যেমন একাউন্টিং,কাস্টমার
সার্ভিস ইত্যাদি এগুলো আপনি আউটসোর্স দিয়ে করিয়ে নিয়ে কোম্পানির মূল কাজে আপনি
ফোকাস বৃদ্ধি করতে পারেন।
৪। দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ জনবল পাওয়াঃ আউটসোর্সিং এর ফলে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য
নির্দিষ্ট দক্ষতার পেশাজীবীদের কাছে কাজ তুলে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার দক্ষ
ও বিশেষজ্ঞ জনবল পেতে পারেন। এর ফলে আপনার কোম্পানীর গুনগত অনেক উন্নত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
নোবেল পুরুস্কার মানে কি ?
এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম একটি কোম্পানি কেন আউটসোর্সিং করে এই সম্পর্কে
বিস্তারিত। এই আর্টিকেল এর পরবর্তী অংশে আমি আপনাকে যা জানাবো তা হলো আউটসোর্সিং
এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত।
আউটসোর্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা
আউটসোর্সিং এর যেমন সুবিধা রয়েছে যেমন তার সামান্য কিছু অসুবিধা রয়েছে। এটা
স্বাভাবিক যার সুবিধা রয়েছে তার কিছু অসুবিধা ও থাকতে পারে। আপনি হয়তো এই
আর্টিকেলটিতে আউটসোর্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানার জন্য এসেছেন। আমি
আপনাকে আর্টিকেলের এই অংশে আউটসোর্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানাবো।
প্রথমেই আমি আপনাকে জানাবো আউটসোর্সিং এর সুবিধা সম্পর্কে।
১। মূল ব্যবসায় মনোযোগঃ আপনি আপনার কোম্পানির যে কাজগুলো মূল নয় সেগুলো
আউটসোর্স দ্বারা করিয়ে নিয়ে আপনি আপনার কোম্পানির মূল কার্যক্রমে মনোযোগ দিতে
পারেন। আপনি যদি আপনার কোম্পানির কাজ গুলো আউটসোর্স দ্বারা করিয়ে নেন তাহলে এটি
আপনার কোম্পানির মূল লক্ষ্য উৎপাদনে বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন।
২। কম খরচঃ আপনি যদি আপনার কোম্পানির বিভিন্ন কাজ উন্নয়নশীল দেশের ফ্রিল্যান্সার
বা কোম্পানির মাধ্যমে করান তাহলে এটি আপনার প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক কম খরচে কাজ
করিয়ে নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার কোম্পানির অনেক খরচ কমে যেতে পারে।
৩। দ্রুত কাজ সম্পাদনঃ আপনি যদি আপনার কোম্পানির কাজ খুব দ্রুত করতে চান, তাহলে
আপনি একই সাথে বিভিন্ন দেশের ফ্রিল্যান্সার দিয়ে, বিভিন্ন কাজ এক সাথে করায় নিতে
পারেন। এর ফলে আপনি আপনার কোম্পানির কাজ আরো দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে
পারেন।
এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম আউটসোর্সিং এর সুবিধা সম্পর্কে।এখন আমি আপনাকে জানাবো
আউটসোর্সিং এর অসুবিধা সম্পর্কে।
১। যোগাযোগের সমস্যাঃ আউটসোর্সিং মূলত হয় এক কোম্পানি অন্য দেশের কোম্পানি বা
ব্যাক্তিকে কে দিয়ে করিয়ে নেই । কিন্তু বিভিন্ন দেশের সময়, সংস্কৃতি এবং ভাষার
পার্থক্যের কারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যখন আপনি
যোগাযোগ করতে যাবেন তখন আপনার এই সমস্যা গুলো দেখা দিতে পারে।
২। গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকিঃ আপনি যখন আপনার কোম্পানির কাজ আউটসোর্স দ্বারা
করিয়ে নিবেন তখন সাধারণত আপনি আপনার কোম্পানির ডিটেলস সেই কোম্পানিকে আপনি
দিবেন। সে ক্ষেত্রে আপনার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতে পারে। আপনার ডেটা
চুরি বা অপব্যবহারের সম্ভাবনাও থাকতে পারে।
৩। আস্থার অভাবঃ আপনি যখন কোন বিদেশী ফ্রিল্যান্সার কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করাবেন।
সে কোম্পানি যদি আপনাকে সময় মত কাজ সাবমিট না করে। সে ক্ষেত্রে আপনার কোম্পানি
ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তখন আপনার কোম্পানির আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে যার
ফলে পরবর্তি কাজ গুলো তে আপনি আস্থা হারিয়ে ফেলবেন ।
৪। মান নিয়ন্ত্রণে সমস্যাঃ আপনি যখন আপনার কোম্পানির কোন কাজ করিয়ে
নিবেন। তখন আপনি সে কাজটি যেরকম প্রত্যাশা করেন সেরকম নাও হতে পারে। এমনও হতে
পারে আপনার পক্ষে তার কাজের মান যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে।এতক্ষণ আমি আপনাকে
জানালাম আউটসোর্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত।
শেষ কথা
এই পুরো আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে যা জানিয়েছি তা হল আউটসোর্সিং কাকে
বলে,আউটসোর্সিং এর কাজ গুলো কি কি,একটি কোম্পানি কেন আউটসোর্সিং করে,আউটসোর্সিং
এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত।
আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি
আপনার মনের ভেতরে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের
সাথে শেয়ার করুন এবং এইরকম তথ্যসম্বলিত ও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের
ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url