গুগল পে এলো বাংলাদেশে লেনদেন হবে এখন আরো স্মার্ট ও সহজ
২০২৫ সালের ২৪ জুন বাংলাদেশে লঞ্চ হলো গুগল পে । এই আর্টিকেল টি আমি জানানোর
চেষ্টা করেছি এটা কিভাবে কাজ করে এবং কতটা
উপকারি তাই
আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন ।
এছাড়াও এই আর্টিকেল টি গুগল পে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আপনাকে জানাবো ।
ভুমিকা
লাস্ট এক দশকে আমাদের লেনদেনের ধরন অনেকটা চেঞ্জ হয়েছে। এ যেমন কেউ বন্ধুকে টাকা
পাঠাতে এমএফএস এর মাধ্যমে। আবার
অনলাইনে
কেনাকাটায় আমরা ব্যবহার করছি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড। আর এক অ্যাকাউন্ট থেকে
আরেক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করছি ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপে। সব মিলিয়ে বলা
যায় এম এফ এস, ব্যাংক কার্ড আর অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল
পেমেন্ট আর ট্রানজেকশনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি।
গুগল পে কি
এই সম্ভাবনাই মার্কেটেই এবার প্রবেশ করতে যাচ্ছে বিশ্বসেরা টেক জায়ান্টে পেমেন্ট
প্ল্যাটফর্ম গুগল পে। এটি মূলত পেয়ার তু পেয়ার পেমেন্ট এবং অনলাইন বা ইনস্টল
লেনদেনের ডিজাইন করা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে তাদের ব্যাংক কার্ড এন এফ সি
টেকনোলজির মাধ্যমে ফোনে সেভ করে।
আর কার্ড সাথে না রেখেই যে কোন সময় পেমেন্ট করতে পারবেন।আমরা অনেকেই জানি পাশের
দেশ ভারতে এই google পে কি বিশাল এক পরিবর্তন এনেছে।
আরো পড়ুনঃ
ফ্রিল্যান্সিং শিখার গুরুত্বপুর্ন টিপস
সেখানকার শক্তিশালী ইউপিআই সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়ে গুগল পে সুপারমল থেকে শুরু
করে ফুটপাথের সাধারণ দোকানে পর্যন্ত সব ধরনের লেনদেনকে ক্যাশলেস এবং কার্ডলেস করে
দিয়েছে। এবং খুব শিঘ্রই গুগল পে আসছে বাংলাদেশে।
তাই স্বাভাবিক ভাবে ই প্রশ্ন উঠছে আমরা তো ইতিমধ্যেই ডিজিটাল পেমেন্টে
অভ্যস্ত।তাহলে গুগল পে নতুন করে কি সুবিধা দিবে? আর দেশের বাজারে থাকা এমএফএস
কোম্পানিগুলোই বা এই বিশ্বমানের প্রতিযোগিতার জন্য কতটা প্রস্তুত। আমাদের আজকের
আর্টিকেলটিতে আপনাকে জানাবো বাংলাদেশের google pay আসলেই ডিজিটাল পেমেন্ট
সিস্টেমে কেমন পরিবর্তন আসতে পারে
গুগল পে এর ইতিহাস
গুগল পে এর আজকের যে রূপ আমরা দেখছি তার পেছনের গল্পটা কিন্তু বেশ মজার এবং এটি
ধাপে ধাপে কি হয়েছে। গুগল এর ডিজিটাল পেমেন্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে
গুগল ওয়ালেট দিয়ে। বলা যায় ডিজিটাল মানিব্যাগের প্রথম সংস্করণ।
যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের ক্রেডিট,
ডেবিট বা
বিভিন্ন লয়ালিটি কার্ড এন এস সি প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরোধের মাধ্যমে নিরাপদে
রাখতে পারতেন। পাশাপাশি বন্ধুদের মধ্যে টাকা পয়সা লেনদেনের সুবিধা ও ছিল। কিন্তু
একটা সমস্যা ছিল সব ফোনে গুগল ওয়ালেট চলতো না।
এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে এবং নিরাপদ থেকে আরো শক্তিশালী করতে google ২০১৫ সালের
নিয়ে আসে android পে। এতে টোকেনাইজেশন নামে একটি বিশেষ প্রকৃতি ব্যবহার করা হয়।
যা আপনার কার্ডের আসল তথ্য গোপন রেখে প্রতিটি লেনদেন কে অনেক বেশি নিরাপদ করে
তোলে এবং এটি আগের চেয়ে অনেক বেশি ডিভাইসে সাপোর্ট করে।
আর পড়ুনঃ
অনলাইনে কিভাবে আয় করবেন জেনে নিন
এরপর ২০১৮ সালে গুগল একটি বড় সিদ্ধান্ত নেই। তারা তাদের এই দুইটি অর্থাৎ google
ওয়ালেট এবং অ্যান্ড্রয়েড পে কে এক করে ফেলে। এবং জন্ম হয় আজকের গুগল পে এর। এ
মূল উদ্দেশ্য ছিল সব ধরনের পেমেন্টের জন্য ব্যবহারকারীদের একটি সহজ গোছানো
অভিজ্ঞতা দেওয়া। কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়।
২০২২ সালে গুগল আবারো গুগল ওয়ালেটকে ফিরিয়ে আনে। তবে এবার এর ভূমিকা কিছুটা
ভিন্ন এবং আরো স্পষ্ট। এখন ব্যাপারটাকে এভাবে ভাবা যেতে পারে।
গুগল ওয়ালেট হলো আপনার আসল মানিব্যাগের ডিজিটাল রুপ। এখানে আপনি আপনার বিভিন্ন
কার্ড,মেট্রো পাস, প্লেনের বোর্ডিং পাস, সিনেমার টিকিটের সবকিছু গুছিয়ে
রাখবেন।আর আর গুগল প্লে হলো সেই ওয়ালেট এর ভেতরে থাকা পাট ব্যবহার করে টাকা
লেনদেন বা প্রেমেন্ট করার সার্ভিসটি।
গুগল পে এর মুল লক্ষ্য
শুরু থেকে গুগল এর মূল্য দুটি বিষয়ের উপর।
১। ব্যবহারকারী তথ্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
২। আর একটি স্মুথ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স
আর এই কারণেই তারা প্লাটফর্ম থেকে নিয়মিত আপডেট করে চলছে। যাতে ডিজিটাল লেনদেন
সবার জন্য আরো নিরাপদ এবং সহজ হয়ে ওঠে।
গুগল পে এর জনপ্রিয়তা
গুগল পে এর জনপ্রিয়তা মূল কারণ দুটি
১। বিশ্বমানের নিরাপত্তা
২। সহজ ব্যবহার
নিরাপত্তার জন্য একটি টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর মানে হল পেমেন্টের
সময় আপনার আসল কার্ড নম্বর কখনোই শেয়ার হয় না। বরং একটি সুরক্ষিত ওয়ান টাইম
কোড ব্যবহার করা হয়। এর সাথে আছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডির মত বায়োমেট্রিক
লগইন সুবিধা।
আরো পড়ুনঃ
নোবেল পুরুস্কার মানে কি ?
আর ছবি আর কথা বললে এই একই অ্যাপ দিয়ে আপনি বন্ধুকে টাকা পাঠানো, দোকানে ট্যাপ
করে পেমেন্ট করা বা অনলাইনে কেনাকাটা সবই করতে পারবেন। এটি গুগলের অন্যান্য
সার্ভিস যেমন ক্রোম ব্রাউজারের সাথে যুক্ত থাকায় অনলাইন পেমেন্ট হয়ে যায় এক
ক্লিকে। এমনকি আইফোন ইউজারদের জন্য গুগল পে এর আলাদা অ্যাপ রয়েছে। তাই এটি
প্রায় সবার জন্য একটি সহজ সমাধান।
বহিঃবিশ্বে গুগল পে
তাহলে সারা বিশ্বে গুগল পে ঠিক কতটা জনপ্রিয় বা এর ব্যবহারিক বা কতটুকু? এর
বিশালতা বুঝতে কয়েকটি সাধারণ তথ্যই যথেষ্ট। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ীঅনুযায়ী
বিশ্বের ৪২ টি দেশে গুগল পে এর একটিভ সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৫০
মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় ১৫ কোটিরও বেশি।
আর শুধু যদি ট্যাপ করে পেমেন্ট করার সুবিধার কথা বলি তাহলে গুগল এর তথ্য অনুযায়ী
এই সার্ভিস এই তারা তাদের google ওয়ালেটের মাধ্যমে প্রায় ৬১ দেশের দিয়ে থাকে। এ
বিপুল জনপ্রিয়তার পিছনে মূল কারণ কয়েকটি।
- প্রথমতঃ এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ।
- দ্বিতীয়তঃ এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বমানের হওয়ায় মানুষের উপর ভরসা করতে পারে।
- তৃতীয়তঃ ছোট বড় সব ধরনের দোকানে এটি গ্রহণযোগ্য।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে গুগলের ও অন্যান্য দরকারি সার্ভিস গুলোর সাথে এটি এমনভাবে
কানেক্টেড ব্যবহার করে ডিজিটাল লাইফ স্টাইল অনেক বেশি সহজ করে দেয়।
আরো পড়ুনঃ
কি ওয়ার্ড কি ?
Google pay এর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় এবং সফল উদাহরণ হল আমাদের
পাশের দেশ ভারত। ২০২৩ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের google পে ব্যবহারকারীর
সংখ্যা প্রায় ৬৭ মিলিয়ন অর্থাৎ পৌনে কোটিরও বেশি। এই বিপুল সংখ্যার কারণে ভারতে
এখন গুগল পে এর সবচেয়ে বড় বাজার।
ভারতে তাদের এ অবিশ্বাস্য সফলতার পিছনে মূল রহস্যটা কি
এর উত্তর হল ইউপিআই এবং ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস। এটি হল ভারতের নিজস্ব একটি
রিয়াল টাইম পেমেন্ট সিস্টেম যা দেশটির ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া
এন পি সি আই পরিচালনা করে।
ইউকিআই এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি ব্যবহারকারীদের কোন ফি ছাড়াই এক ব্যাংক
থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা, বিল দেওয়া বা দোকানে পেমেন্ট করার সুযোগ করে দেয়।
Google পেজ বুদ্ধিমত্তার সাথে ভারতের এই শক্তিশালী সিস্টেমের সাথে নিজেদের যুক্ত
করেছে।
তারা ইউপিআই বি সি কিউআর কোড এবং এন এফ সি প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেমেন্ট করার
ব্যবস্থা করেছে। যা ভারতের বাজারে তাদের অবস্থানকে পাথরের মত শক্ত করেছে। এর
ফলাফল টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক রিপোর্ট বলছে শুধু 2025 সালের মে মাসেই গুগল পে এর
মাধ্যমে ভারতে মোট আট লাখ 85 হাজার কোটি রুপির লেনদেন হয়েছে।
এ বিশাল অংক গুগল পে বৃষ্টি দিতে বৃহত্তম ইউপিআই প্লাটফর্মে পরিণত করেছে। তবে
বাজারটা কতটুকু প্রতিযোগিতামূলক তা বোঝা যায় তীর্থস্থানে থাকা ফোন পে এদিকে
তাকালে। যারা একই সময় প্রায় ১২ লাখ কোটি রুপির বেশি লেনদেন করেছে।
ভারতের সফলতার পর গুগল এখন আমাদের এই অঞ্চল অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব
এশিয়ার অন্যান্য দেশেও একইভাবে নিজেদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। যেমন সিঙ্গাপুরে google
pay এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। পাসপোর্ট ট্রেনের ভাড়া দেওয়া থেকে শুরু
করি স্মার্ট ফার্সটি কেনাকাটা পর্যন্ত সবকিছুতে এর ব্যবহার রয়েছে। আবার
মালয়েশিয়ায় তার একটি দারুণ কৌশল নিয়েছে।
সেখানে তারা শপিপে বা টিএনজি ইওয়ালেটের মত জনপ্রিয় লোকাল পি ওয়ালেটগুলোর সাথে
যুক্ত হয়েছে। এটি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার google এর প্রথম কোন ই ওয়ালেটের
পার্টনারশিপ। যার ফলে তারা এক ধাক্কার মালেশিয়ার প্রায়ই ৮৮ পার্সেন্ট ইওয়ালেট
এর ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম জনের রিপোর্ট অনুযায়ী এই বছরেরই ১২ই মার্চ
সেখানে গুগল পে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে। আর সেই সাথে ডেইলি স্টারের ২৮
শে মেরএকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী আমাদের দেশেও আসছে গুগল প্লে। এইসব উদাহরণ দেখার
পর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে কতটা প্রভাব পরবে গুগল পে এর
ভারতের google পে যা করেছে বাংলাদেশের পার্সপেক্টিবে তার কতটা প্রভাব পড়বে?
মালয়েশিয়ার মতো এখানেও কি তারা দেশীয় কোন কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপ করবে
নাকি সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামবে? সবচেয়ে বড় কথা আপনার আমার মত সাধারন
ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা কতটা বদলাবে? এবং দেশের শক্তিশালী এফ এস সার্ভিস গুলোই বা
এই চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আগে চলুন একবার আমাদের দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট এর
বর্তমান চিত্রটা এক ঝলকে দেখে নিই।
ঠিক কিরকম একটি বাজার google পেতে প্রবেশ করতে চলেছে। আমাদের দেশে ডিজিটাল
লেনদেনের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এমএফএস কোম্পানিগুলো। যদিও ব্যাংক কার্ড এর
ব্যবহার দেখে অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু চেঞ্জটা আসে ২০১১ সাল থেকে যখন এমএফএস
এর যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকেই দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী ডিজিটাল লেনদেনের সাথে
ইউজ টু হতে শুরু করে।
কিন্তু এর প্রভাবটা ঠিক কতটা বড়?
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এখন দেশের দৈনিক গড়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার
কোটি টাকা লেনদেন হয় যার সিংহভাগই আসে এম এফ এস এর মাধ্যমে।
আর ২০২৫ সালের শুরু পর্যন্ত দেশে এমএফএস অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩
কোটিরও বেশি অর্থাৎ দেশের মানুষ এখন ডিজিটাল পেমেন্ট এর জন্য প্রস্তুত। একই সাথে
আরেকটি ইন্টারেস্টিং বিষয় হল মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা আই ব্যাংকিং এর
দিকেও ঝুকছে।
ইভেন ব্যাংকের মোবাইল ব্যবহার করে এখন ঘরে বসে আর টি জি এস,এন পি এস পি বা বি এফ
টি চেন এর মত সিস্টেমের মাধ্যমে এক ব্যাংকের থেকে অন্য ব্যাংকে সহজে টাকা পাঠানো
যাচ্ছে একই সাথে শহরের জীবন যাদের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ব্যাংক কার্ড এর
ব্যবহারও
কিন্তু এখানে ছোট্ট সমস্যাও তৈরি হচ্ছে অনেক গ্রাহকের কাছেই এখন একাধিক ব্যাংকের
কার্ড কার্ড থাকে এসব কার্ড একসাথে মানি ব্যাগে বহন করাটা অনেক সময় বেশ ঝামেলার
আর ঠিক এই জায়গাতেই অর্থাৎ দেশের এমএফএস এর বিশাল ব্যবহারকারী ব্যাংক অ্যাপ ও
জনপ্রিয়তা
এবং একাধিক কার্ড এর বহনের এই ছোটখাটো ঝামেলা প্রেক্ষাপটে গুগুল পে দেশের ডিজিটাল
লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে গুগল
পেয়ে কি কি সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে আমাদের দেশের জন্য।
গুগল পে কি কি সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে
প্রথমতঃ সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য সবচেয়ে বড় পরিবর্তন টা আসবে সুবিধায়।গুগল পে
তার সহজ ব্যবহার এবং google এর নিজস্ব ইকোসিস্টেম যেমন gmail ক্রোমের সাথে
কানেক্টেড থাকার কারণে খুব সহজেই শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সব ধরনের মানুষের কাছে
পৌঁছাতে পারবে।
একবার ভাবুন আপনার একাধিক ব্যাংক কার্ড, লয়াটি কার্ড বা কোন ওয়ালেটের ঝামেলায়
থাকছে না। একটি অ্যাপে আপনি পাচ্ছেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, রেওয়ার্ড, এমএফসি কার্ড
এবং এনআরসি পেমেন্ট এর মত সুবিধা।
এর মানে হলো মানিব্যাগ বা কার্ড ছাড়াই শুধু ফোন ট্যাপ করেই সব ধরনের পেমেন্ট করা
সম্ভব হবে যা আমাদেরকে সত্যিকারের ক্যাশলেস ও কার্ডলেস একটি ভবিষ্যৎ এর দিকে
এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দ্বিতীয়তঃ google পে টাকা লেনদেনের বাইরে অনেক কিছু। এর মাধ্যমে বিল
পেমেন্ট,মোবাইল রিচার্জ,অনলাইন শপিং এমন কি বিদেশ থেকে রেমিটেন্স গ্রহণ করার
প্রক্রিয়াও অনেক সহজ হয়ে যেতে পারে। আর যদি গুগল পে দেশের বাস্তবতার কথা মাথায়
রেখে এমএফএস এর মতো ক্যাশ কিংবা ক্যাশ আউট করার মত সুবিধা যুক্ত করে তাহলে এটি
সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব জনপ্রিয়তা পাবে।
তৃতীয়তঃ এর প্রভাব শুধু ব্যবহারকারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। Google পে এর
মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করার সহজ হয় এই দেশের ছোট বড় দোকান, সুপার
শপ,রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ই-কমার্স এবং বিশেষ করে ফেসবুক ভিত্তিক এফমার্স
প্লাটফর্ম গুলোর ব্যবসার সুযোগ আরও বাড়াবে।
এবং সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো ট্রাস্ট। আমরা জানি দেশের একটি বড়
জনগোষ্ঠীর এখনো নগদ টাকার লেনদেনে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে কিন্তু google পে এর
বিশ্বমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা মানুষের ডিজিটাল
পেমেন্টের প্রতি আসতে বাড়াতে সাহায্য করবে।
ইউজাররা যখন এটিকে নিরাপদ মনে করবে তখন স্বাভাবিকভাবে ক্যাশের উপনির্বশীলতা কমবে।
যা একটি ক্যাশলেস ও কার্ডলেস অর্থনীতির দিকে আমাদের যাত্রা সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ
হবে। কিন্তু এত সুবিধার পাশাপাশি নিরাপত্তার প্রশ্ন তো চলে আসে।
ফোন হারিয়ে গেলে কি হবে
ফোন যদি হারিয়ে যায় বাচ্চ চুরি হয়ে যায় তাহলে কি হবে? এটি google পে এর
সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাগুলোর একটি।
প্রথমতঃ প্রতিটি লেনদেনের জন্য আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেসআইডির মতো
বায়োমেট্রিক লগইন অথবা পিন দরকার হয়।
দ্বিতীয়তঃ এটি আপনার আসল কার্ডের নাম্বার ব্যবহারে ই করেনা বরং প্রতিটি লেনদেনের
জন্য একটি ইউনিক ভার্চুয়াল টোকেন তৈরি করে। আর ফোন হারিয়ে গেলে আপনি গুগল এর
ফাইন্ড মাই ডিভাইস ব্যবহার করে দূর থেকে ফোনে সব ডেটা মুছে ফেলতে পারবেন।
এতে কেউ আপনার ফোন হাতে পেলেও আপনার অনুমতি ছাড়া কেউ এক টাকাও লেনদেন করতে পারবে
না। বাংলাদেশের google পে এর ইনট্রেনস একটা স্মুথ হবে না।
কারণ এখনকার বাজারের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো বিকাশ, নগদ রকেট এর মত এমএফএস
প্লাটফর্ম গুলো। এক্ষেত্রে যদি গুগল পে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামে তাহলে তাদের
এগিয়ে যাওয়ার গতি কমে যেতে পারে।তার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর কৌশল হতে পারে একটি
পার্টনারশিপ মডেল।
ঠিক যেভাবে তারা মালয়েশিয়ার স্থানীয় ইওয়ালেট গুলোর সাথে যুক্ত হয়ে সফল
হয়েছে। সে একি মডেল বাংলাদেশে একটি ভালো সমাধান হতে পারে।
গুগল পে এর আলোচনা সাথে সাথেই আরেকটি নাম ও স্বাভাবিক ভাবে চলে আসে যেমন পেপাল।
পেপাল বিশেষ করে আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য যা অনেক আকাঙ্খিত একটি নাম।
আমাদের বুঝতে হবে দুটি প্লাটফর্মের ফার্স্ট মূলত ভিন্ন।
পেপাল ব্যবহৃত হয় মূলত আন্তর্জাতিক বা ক্রস বর্ডার লেনদেনের জন্য আর google পে
ব্যবহৃত হয় দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ লোকাল পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে। এই দুটি
প্লাটফর্ম যদি একসাথে আমাদের দেশে আসে তবে তা দেশের ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট থেকে
শুরু করে পুরো ডিজিটাল লেনদেনের চিত্র বদলে দিতে পারে।
গুগল পে এর মুল উদ্দেশ্য
নিঃসন্দেহে google পে দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে একটি নতুন এবং আধুনিক ধাপ
যোগ করবে। সম্ভবত এর প্রথম সাফল্য আসবে শহর ভিত্তিক এবং প্রযুক্তি সংযোজন
ব্যবহারকারীদের মধ্যে। যাদের জন্য এটি হবে একটি দারুন ইউজার ফ্রেন্ডলি
বিকল্প।
এটি রাতারাতি সবকিছু পাল্টে দেবে না। তবে ধীরে ধীরে আমাদের টাকা লেনদেনের
অভ্যাসকে আরো উন্নত করার ক্ষমতা রাখবে। যেমন আমরা এখন যে কিউআর কোড স্ক্যান করে
বা মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাই google pay সেই অভিজ্ঞতাটাকেই আরো স্মার্ট
দ্রুত ও ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তুলতে পারে।
ভারতের ইউপিআই সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করার যে সফল অভিজ্ঞতা গুগল পে এর
রয়েছে সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব পেমেন্ট সিস্টেম যেমন
আরটিজিএস, এনপিএসবি বা বিএফটি এর সাথে যুক্ত হয়ে এটি একটি দারুন সমাধান হয়ে
উঠতে পারে।
সম্প্রতি দেশের স্টারলিংক এর ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ায় বিষয়টিও এর ব্যবহারকে
আরো মসৃণ করতে সাহায্য করবে।
শেষ কথা
শেষে বলতেই হয় google pay একা সবাইকে ডিজিটাল পেমেন্ট অভ্যস্ত করে ফেলতে পারবেনা।
কিন্তু google এর মত একটি বিশ্বমানের ব্র্যান্ডের উপস্থিতি ডিজিটাল লেনদেনের
প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অনেকখানি বাড়িয়ে দেবে। এ আস্থায় হতে পারে একটি
ক্যাশলেস ও কার্ডলেস অর্থনীতি করে তোলার মূল ভিত্তি। যা দেশ ডিজিটাল লেনদেনের
একটি নতুন সংস্কৃতি তৈরি করবে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url