ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেল ওষুধ হিসাবে কতোটা কার্যকর ? উপকারিতা ও সতর্কতা জানুন
বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর দীর্ঘমেয়াদী রোগে পরিণত হয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি, কারণ সঠিক খাদ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে । আপনার মনের মধ্যে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন এই আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়লে।
বেল পাতার উপকারিতা,বেল পাতার অপকারিতা,বেল খাওয়ার উপকারিতা,পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা ও খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেল টি সম্পুর্ণ পড়ুন ।
বেল পাতার উপকারিতা,বেল পাতার অপকারিতা,বেল খাওয়ার উপকারিতা,পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা ও খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেল টি সম্পুর্ণ পড়ুন ।
ভুমিকা
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন ফল হলো বেল। এটি
বৈজ্ঞানিকভাবে Aegle marmelos নামে পরিচিত এবং এই ফলটির অনেক ঔষধি গুনাগুন ও
উপকারিতা রয়েছে চলুন এই আর্টিকেল টি তে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো বেল
পাতার উপকারিতা,বেল পাতার অপকারিতা,
বেল খাওয়ার
উপকারিতা,পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা ও খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত।
বেল পাতার উপকারিতা
আর্টিকেলের প্রথম অংশে আমি আপনাকে বেল পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর
চেষ্টা করি চলুন-
বেল ফলের মতো এর পাতাও বহু উপকারী এবং প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ ও ইউনানী
চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
হজম শক্তি বাড়ায়ঃ বেলের পাতা আপনার শরীরের হজমজনিত সমস্যা যেমন এসিডিটি, গ্যাস
অম্লতা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের ব্যাথা উপশমের সাহায্য করে। এটি অন্তরের
কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেঃ বেল পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং
বিশেষ কিছু যৌগ রক্তে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা
নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত বেল পাতার রস পান করলে ডায়াবেটিস রোগীরা
উপকৃত হতে পারেন।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ বেল পাতা কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে এবং রক্ত চাপকে
স্বাভাবিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই পাতা হার্টের কার্যকারিতা
বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
রক্ত বিশুদ্ধ করেঃ বেল পাতায় থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট বিষাক্ত পদার্থ বের করতে
সাহায্য করে শরীরে যদি কোন টক্সিন নামক রাসায়নিক বিষাক্ত থাকে সে বিষাক্ত
পদার্থগুলো বের করে দেয় এবং এতে করে রক্ত পরিশোধিত হয় এবং ত্বক সুন্দর ও নমনীয়
থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ বেল পাতায় থাকা ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টি
অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা ঠান্ডা কাশি ইত্যাদি সহ
বিভিন্ন সংক্রামক রোগ হতে প্রতিরক্ষা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেঃ বেল পাতা লিভার ও কিডনি এর টক জমে থাকার
টক্সিন গুলো দূর করতে সাহায্য করে এতে করে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি হয়
এবং এর কার্যকারিতা উন্নত হয়।
চর্ম রোগের ওষুধঃ বেল পাতার রস ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, ফুসকুড়ি,
চুলকানি ইত্যাদি নিরাময়ে সহায়তা করে। এটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি
ফাঙ্গাল উপাদান সমৃদ্ধ, যা ত্বক কে সুস্থ রাখে।
এতক্ষণ আমি আপনাকে বেল পাতার
উপকারিতা সম্পর্কে জানাচ্ছিলাম চলুন এখন আমি আপনাকে বেল পাতার ব্যবহার বিধি
সম্পর্কে জানাবো।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ দুই থেকে তিনটি বেল পাতা নিন এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন এবং সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সকালে উঠে খালি পেটে চিবিয়ে খেয়ে
ফেলুন।
আপনার যদি হজমের সমস্যা হয় তাহলে আপনি বেল পাতার রস করে খেতে পারেন অথবা বেলপাতা
চা হিসেবে খেতে পারেন। আমি তো বেল পাতার রস গ্রহণ করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক
থাকে এছাড়াও নিয়মিত বেলের পাতার কিছু অংশ মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক উজ্জ্বল
হয়।
আর্টিকেলের এই অংশ আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম বেল পাতার উপকারিতা চলুন আর্টিকেলের
পরের অংশে আমি আপনাকে বেল পাতার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাই।
বেল পাতার অপকারিতা
প্রতিটা জিনিসেরই কোন না কোন উপকারিতা এর পাশাপাশি এর অপকারিতা রয়েছে। বেল পাতাও
এর ব্যতিক্রম নয়। চলুন আর্টিকেল এই অংশ আমি আপনাকে বেল পাতার অপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত জানাই।
অল্প পরিমাণে খাওয়াঃ যদিও বেল পাতা হজমে সহায়ক, তবে অতিরিক্ত খেলে এটি গ্যাস,
ডায়রিয়া বা পেটের ব্যথার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে বেশি পরিমাণে বেল পাতার রস পান
করলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর জন্যই আপনাকে বেল পাতা অল্প পরিমাণে খেতে
হবে।
আরো পড়ুনঃ
পান্তা ভাতের উপকারিতা
রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারেঃ উপকারিতা তাতে আমি আপনাকে জানিয়েছি যে বেল পাতা
রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে তবে যদি আপনি বেশি পরিমাণে বেলপাতা গ্রহণ করে থাকেন
তাহলে এটি আপনার রক্তচাপ একেবারেই কমিয়ে দেবে যেটি আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত
ক্ষতিকর ।
এমনকি আপনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন না এজন্য অবশ্যই আপনাকে
সাবধানতার সাথে এই বেল পাতা গ্রহণ করতে হবে এবং অল্প পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।
বেলপাতা বেশি পরিমাণে গ্রহণ
করলে আপনার মাথা
ঘোরা দেখা দিতে পারে অথবা বমি বমি ভাব দেখাতে পারে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারেঃ গর্ভবতী বা
স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য বেল পাতার সঠিক মাত্রা সম্পর্কে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই।
তাই এই সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেল পাতার রস পান করা উচিত নয়
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারেঃ আমি আপনাকে উপরে বেল পাতার উপকারিতার
অংশে জানিয়েছি বেল পাতা রক্তে গোলকের মাত্রা কমিয়ে দেয়। তবে আপনি যদি বেলপাতা
আধ্যাত্মিক পরিমাণে গ্রহণ করে থাকেন তাহলে এটি আপনার লোকোশের মাত্রা এতটাই কমিয়ে
দিতে পারে যে আপনি এর কারণে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে ।
আপনি মাথা ঘুরে পড়ে যেতে
পারেন এর জন্য অবশ্যই আপনাকে অল্প পরিমাণে এবং স্বাভাবিক নিয়মে বেলপাতা গ্রহণ
করতে হবে। এতক্ষন আমি আপনাকে বেল পাতার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছিলাম চলুন এখন
আমি আপনাকে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
বেল খাওয়ার উপকারিতা
বেল (Aegle marmelos) একটি
অত্যন্ত পুষ্টিকর
ও উপকারী ফল, যা শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রাচীনকাল থেকেই এটি
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই চলুন এই আর্টিকেলের এই অংশ আমি আপনাকে
বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাই।
রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করেঃ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং অনেক সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে
সাহায্য করে।
লিভার ও কিডনি সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করেঃ কাচা বেল আমাদের শরীরে জমে থাকা
টক্সিনস বের করতে সাহায্য করে যা আমাদের লিভার ও ত্বকের ও কিডনির জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ জেনে সেটি আমাদের লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং কিডনিতে পাথর
হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে কমিয়ে দেয়।
ঠান্ডা কাশি ও শ্বাসকষ্ট থেকে রক্ষা করেঃ বেল সাধারণত আমাদের গলা ব্যথা ঠান্ডা
লাগা এবং যাদের শ্বাসকষ্ট সমস্যা রয়েছে তাদের শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচাতে সাহায্য
করে থাকে। শ্বাসতন্ত্রের গঠন এর সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করেঃ বেলে কিছু এমন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে
যা আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ইন্সুলিনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যারা ডায়াবেটিস রোগীর
জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আপনি যদি একজন ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন তাহলে এই
বেল আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি
খাবার। তাই
আপনাকে চেষ্টা করতে হবে সপ্তাহে একদিন বেল খাওয়ার।
এতক্ষণ তো আমি আপনাকে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানাচ্ছিলাম কিন্তু
চলুন এখন আমি আপনাকে জানাই বেল কিভাবে খাবেন- বেল আপনি কয়েকভাবে খেতে পারেন বা
আপনি পেলে শরবত করে খেতে পারেন, ছাড়াও বেল এমনি তুলে পাকা বেল খেতে পারেন।
আর্টিকেলের এই অংশে আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম বেল খাওয়ার উপকারিতা চলনা আর্টিকেলের
পরের অংশে আমি আপনাকে পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাই।
পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা
আপনি যদি পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা কে জানতে আসেন তাহলে এই আর্টিকেল টি তে এসে
আপনি কোন ভুল করেননি। চলুন আমি আপনাকে কয়েকটি পাকা বেল খাওয়ার উপকারিতা
সম্পর্কে জানাই-
কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা হতে পারঃ যদি উপকারী তাতে আমি আপনাকে জানিয়েছি যে বেল
হজম করতে সাহায্য করে তবে পাকা বেল অত্যাধিক পরিমাণে খাইলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে
পারে। এর জন্য পাকা বেল অত্যাধিক পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
এছাড়াও পাকা বেল খেলে অত্যাধিক পরিমাণে যদি আপনি পাকা বিল গ্রহণ করেন তাহলে
আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে। ছাড়া অতিরিক্ত গ্যাস বা পেট ফাঁপা বা অন্ধ্রের
সমস্যা হতে পারে এবং গর্ভবতী মা এবং স্তনদানকারী মায়েদের এই বেল কে পরিহার করা
উচিত।
এতক্ষণ আমি আপনাকে পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছিলাম
তুলনা টিকেলের পরের অংশে আমি আপনাকে খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
জানায়।
খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণে। খালি পেটে যদি আপনি
নিয়মিত বেল খেতে পারেন তাহলে এই বেল আপনার হজম শক্তিকে আরো বৃদ্ধি করবে এবং হজম
শক্তিকে উন্নত করবে। এছাড়াও খালি পেটে বেল খেলে আপনার ডায়াবেটিসের মান
নিয়ন্ত্রণ রাখে।
খালি পেটে বেল খেলে এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, যা লিভার ও
কিডনির সুস্থতা বজায় রাখে।খালি পেটে বেল খেলে এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে
সাহায্য করে, যা লিভার ও কিডনির সুস্থতা বজায় রাখে। এছাড়াও খালি পেটে বেল খেলে
ত্বক ও দাঁতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকার কারণ বেল চুলকে মজবুত করতে সাহায্য
করে।
শেষ কথা
এই আর্টিকেল টি তে আমি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি বেল পাতার উপকারিতা,বেল
পাতার অপকারিতা, বেল খাওয়ার উপকারিতা,পাকা বেল খাওয়ার অপকারিতা ও খালি পেটে বেল
খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত
হয়েছেন। ধন্যবাদ এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url