বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় - বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ

নবজাতক জন্মের পর মায়েদের বিশেষ চিন্তা হয় তার বাচ্চার যত্ন ঠিক মতো হচ্ছে কি না । সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে হচ্ছে কি না । তেমনি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলো বাচ্চাদের দাত উঠা । অনেক সময় অনেকের দাত স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক সময় পরে বের হয় । এই আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়লে জানতে পারবেন আপনার বাচ্চার দাত না উঠলে কি করণীয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত । 
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স

এছাড়াও জানতে পারবেন বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স,বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ,বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়,বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ,বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভূমিকা

বাচ্চাদের বড় হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে দাঁত ওঠা। বাচ্চারা একটি নির্দিষ্ট বয়সে আসলে এই দাঁত ওঠা শুরু হয়। বাচ্চাদের বয়স যখন ছয় মাস হয় তখন থেকেই তাদের অল্প অল্প করে দাঁত ওঠা শুরু হয়। এই সময় বাচ্চারা অনেক অস্থিরতা এবং অস্বস্তি অনুভব করতে পারে। অনেকে এমন আছে যারা কাঁদে বা খাওয়া কমে যায় সেক্ষেত্রে তার ভালোভাবে যত্ন নেওয়া উচিত। 

এ আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানাবো বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স,বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ,বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়,বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ,বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত। আর্টিকেল এর প্রথম অংশে আমি আপনাকে জানাবো বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স সম্পর্কে বিস্তারিত।

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স

বাচ্চাদের দাঁত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় উঠে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দাঁতের পরিমাণও বাড়ে। এই আর্টিকেলটির এই অংশে  আমি আপনাকে জানাবো বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স সম্পর্কে বিস্তারিত।

১। ৬-৭ মাস বয়সেঃ আপনার বাচ্চা যদি ছয় থেকে সাত মাস বয়সের হয়ে থাকে তাহলে এই সময় নিচের সামনের দুটি দাঁত উঠতে পারে।

২। ৮-১৩ মাস বয়সেঃ আপনার বাচ্চার বয়স যদি ৮ থেকে ১৩ মাসের মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে এই সময় সাধারণত উপরের সামনের দুটি দাঁত উঠে থাকে। আবার এই বয়সে বাচ্চাদের উপরে পাশের দুটি দাঁত উঠতে পারে।
৩। ১৪-১৯ মাস বয়সেঃ আপনার বাচ্চা যদি ১৪ থেকে ১৯ মাসে বয়সের বাচ্চা হয়ে থাকে তাহলে এই সময়ে বাচ্চাদের নিচের পাশের দুটি দাঁত উঠতে পারে এবং প্রথম মোলার দাঁত উঠতে পারে।

৪। ১৯-৩৩ মাস বয়সের বাচ্চাঃ আপনার বাচ্চার বয়স যদি ১৯ মাস থেকে দুই আড়াই বছর হয়ে যায় এই বয়সের মধ্যকার বাচ্চাদের কুনাইন বা ছুচালো দাঁত এবং দ্বিতীয় মোলার দাঁত গজাতে পারে। সাধারণত আড়াই থেকে তিন বছরের বাচ্চাদের মোট 20 টি দুধ দাঁত উঠে থাকে।

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স সম্পর্কে বিস্তারিত এই আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ
সম্পর্কে বিস্তারিত।

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ

আপনি যদি আর্টিকেলটিতে বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ সম্পর্কে জানার জন্য এসে থাকেন তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় ক্লিক করেছেন। চলুন আমি আপনাকে জানাই বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ। নিচে বাচ্চাদের দাঁত ওঠার কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো-

১। অস্থিরতা বা বিরক্তিঃ আপনার বাচ্চা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত কান্না করে বা আপনি দেখেন আপনার বাচ্চা অস্থির আচরণ করে।তাহলে আপনি বুঝবেন আপনার বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় হয়েছে যার ফলে তার এত অস্থিরতা। কারণ এই সময় বাচ্চাদের মাড়িতে চাপ পড়ে যার ফলে বাচ্চা একটু অস্থির হয়ে পড়ে।

২। অতিরিক্ত লালা ঝরাঃ আপনার বাচ্চার যদি দাঁত ওঠার সময় হয়ে যায় তাহলে এর আরও একটি বড় লক্ষণ হচ্ছে আপনার বাচ্চার অতিরিক্ত লালা ঝরতে পারে।
৩। খেতে অনীহাঃ দাঁত ওঠার সময় ছোট বাচ্চাদের মাড়িতে হালকা ব্যথা হতে পারে যার ফলে আপনার বাচ্চার খাওয়ার ইচ্ছা কমে যেতে পারে।

৪। মুখে হাত বা অন্য কিছু গুঁজে রাখাঃ আপনার বাচ্চাকে যদি দেখেন সব সময় মুখে হাত বা অন্য কোনো খেলনা মুখে গুঁজে রাখতে চাই। তাহলে বুঝবেন আপনার বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় হয়েছে।  

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করেছি বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত এর পরবর্তী অংশে আমি আপনাকে যা জানাবো তা হল বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত।

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়

দাঁত উঠার সময় সাধারণত বাচ্চারা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। এমন অবস্থায় বাচ্চার মা-বাবাকেও পড়তে হয় অস্থিরতাই। তাই এই সময় কিছু করণীয় থেকে থাকে।তো চলুন এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানাই বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়।

১। মাড়িতে হালকা মালিশ করুনঃ যেহেতু দাঁত ওঠার সময় বাচ্চার মাড়িতে অস্বস্তি হয় বা হালকা ব্যথাও হতে পারে। আপনার উচিত একটু পরিষ্কার আঙ্গুল দিয়ে ধীরে ধীরে মাড়িতে হালকা করে মালিশ করা। সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার অস্বস্তি একটু কমতে পারে। 
২। চাবানোর জন্য নিরাপদ কিছু দিনঃ শিশুদের মাড়ি অনেক নরম এবং হালকা শক্ত থাকে। মাড়িতে চাপ দিলে শিশুরা আরাম অনুভব করে। এর জন্য তারা কিছু চাবাতে চাই। এ সময় আপনি আপনার বাচ্চা কে পরিষ্কার কাপড় হালকা ভিজিয়ে বা ঠান্ডা টিথার বা নরম রাবারের খেলনা দিতে পারেন।
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়

৩। খাবার বেছে দিনঃ অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় খাবারের প্রতি অনীহা জন্মে। এই সময় আপনি আপনার বাচ্চাকে দিতে পারেন ফ্রিজে রাখা গাজরের স্টিক। ৬ মাস পরের বাচ্চাদের জন্য ঠান্ডা দই বা কলা এগুলো আপনি আপনার বাচ্চাকে খেতে দিতে পারেন।

৪। লালা পরিষ্কার করে দিনঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় দেখা যায় তাদের অতিরিক্ত লালা পড়তে থাকে।এ সময় দেখবেন আপনার বাচ্চার মুখ ঠোঁট দিয়ে লালা পড়ে অথবা  লালা পড়ে  বুকও ভিজে যেতে পারে। এই সময় পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে আপনি আপনার বাচ্চার লালা পরিষ্কার করে দেন।

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত।

বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ

সাধারণত একটা বাচ্চার দাঁত ওঠা শুরু হয় ৬ মাস বয়স পর থেকে। তবে অনেকের দাঁত উঠতে অনেক সময়ও লাগতে পারে। বারো মাস পরেও যদি দাঁত না ওঠে সে ক্ষেত্রে চিন্তার কোন কারণ নেই।এগুলো কিছু কিছু বাচ্চাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায় যদি বাচ্চাদের নির্দিষ্ট সময় পরেও না উঠে সেক্ষেত্রে এটা একটু চিন্তার বিষয়। তাই বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কিছু কারণ নিচে দেওয়া হল।

১। হরমোন জনিত বা থাইরয়েড সমস্যাঃ যদি আপনার বাচ্চার হরমোন জনিত বা হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা থাকে। তাহলে এই কারণে আপনার বাচ্চার দাঁত নাও উঠতে পারে মানে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।

২। জেনেটিক কারণঃ আপনার বা আপনার বংশের কারো যদি ছোটবেলায় দেরিতে দাঁত উঠে থাকে। তাহলে আপনার বাচ্চারও পরবর্তীতে দেরিতে দাঁত উঠতে পারে। এটা জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে।
৩। জন্মগত কিছু সমস্যাঃ বাচ্চাদের একটা জন্মগত রোগ রয়েছে সেটি হল Congenital Anodontia। এটি কিছু শিশুর জন্মগত দাঁতের অসুখ। এর ফলে জন্মগত ভাবে বাচ্চাদের দাঁতের অঙ্কুর থাকে না। যার ফলে দুধ দাত উঠতে একটু সময় নিতে পারে বা বাচ্চার দাঁত নাও উঠতে পারে। 

৪। পুষ্টির ঘাটতিঃ আপনার বাচ্চার যদি ফসফরাস,ক্যালসিয়াম,ভিটামিন ডি বা অন্যান্য খনিজ উপাদানের অভাব থাকে। তাহলে আপনার বাচ্চার শরীরে পুষ্টির অনেক ঘাটতি রয়েছে। যার ফলে দাঁতের গঠন প্রক্রিয়া ধীর হতে পারে।

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত। এই আর্টিকেলের শেষ অংশে আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত।

বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয়

আপনি যদি এই আর্টিকেলটিতে বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয় সম্পর্কে জানার জন্য এসে থাকেন তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন।

১। প্রতিদিন সকাল বেলায় রোদে রাখাঃ সূর্যের আলোতে রয়েছে ভিটামিন ডি। এই ভিটামিন ডি বাচ্চার দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। প্রায় প্রতিদিন সকালবেলা আপনি আপনার বাচ্চাকে কয়েক মিনিটের জন্য রোদে রাখতে পারেন।
২। ধৈর্য ধরে বারো মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করুনঃ সাধারণত বাচ্চাদের বারো মাস পর্যন্ত দাঁত উঠে থাকে।তাই আপনার উচিত বাচ্চার বারো মাস না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। বারো মাস পরেও যদি দাঁত না ওঠে সে ক্ষেত্রে আপনি কিছু স্টেপ নিতে পারেন।
বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয়

৩। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার দিনঃ ছোট বাচ্চার শরীরে পুষ্টি খুবই জরুরী। আপনার বাচ্চার যদি দাঁত না উঠে সে ক্ষেত্রে তো আপনার বাচ্চার জন্য আরো জরুরি।আপনি আপনার বাচ্চাকে ক্যালসিয়াম,ভিটামিন ডি,ফসফরাস এবং আয়রন জাতীয় খাবার দিতে পারেন।এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয়।

শেষ কথা 

এই পুরো আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে যা যা জানালাম তা হল বাচ্চাদের দাঁত ওঠার বয়স,বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ,বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয়,বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ,বাচ্চাদের দাঁত না উঠলে করণীয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত।

আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি আপনার মনের ভেতরে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এইরকম তথ্যসম্বলিত ও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

adsterra

banner