শীতে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি - মাছ দ্রুত বৃদ্ধির ঔষধ
বর্তমান সময়ে মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। তবে মাছ চাষ করার আগে আপনাকে জানতে
হবে কোন সময় কোন মাছ চাষ করলে আপনি বেশি লাভবান হবেন। আপনি যদি একজন সচেতন
ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে মাছ চাষ করার পূর্বে শীতে কোন মাছ চাষে বেশি লাভ হয়
নিশ্চয়ই সেটি জানতে চান। আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি মাছ
দ্রুত বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
মাছ চাষে শুধুমাত্র আর্থিক লাভবান হওয়া যায় বিষয়টি এমন না। চাষ করার ফলে আমরা
পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মাছ পেয়ে থাকি। বাজারে কেনা মাছ সব সময় ভালো হয় না। তবে
আপনার যদি নিজের চাষের পুকুর থাকে তাহলে আপনি পুষ্টিকর মাছ খেতে পারবেন।
ভুমিকা
মাছ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু অর্থনীতিতেই
নয় সেইসাথে আমাদের আমিষের ঘাটতিও পূরণ করে। মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য মাছ আমিষের
একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
আরো পড়ুনঃ
অনলাইনে কিভাবে ফ্রি ইনকাম করা যায়
শীতকালে তাপমাত্রা অত্যাধিক কম থাকার কারণে মাছের বৃদ্ধি কমে যেতে পারে। এর জন্য
এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানাবো শীতে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি ও মাছ দ্রুত
বৃদ্ধি করার উপায় সম্পর্কে।
শীতকালে পুকুরের পানির পরিচর্যা
শীতকালে মাছ চাষ করা মাছ চাষীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আপনি প্রথমত
যে জিনিসটা খেয়াল রাখবেন সেটা হল পুকুরের পানি। কারণ পুকুরের পানি যদি ভালো না
থাকে তাহলে সেখানে মাছ বৃদ্ধি পাবে না এবং মাছ সুস্থ থাকবে না।
চলুন আমি আপনাকে শীতকালে পুকুরের পানির পরিচর্যা করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে
জানায়। শীতকালে অনেক ঠান্ডা পড়ে এবং এর কারণে পানির তাপমাত্রা কমে যায় মানুষের
জন্য ও অনেক অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই ঠান্ডার ফলে অনেক মাছ মারা যেতে পারে। এর জন্য পুকুরে জলপাম্পের ব্যবস্থা করা
বা পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা যাতে করে যাতে করে পানি তুলনামূলক গরম থাকে , কারন
আমরা জানি পানির স্থির থাকলে পানির তাপমাত্রা আরো কমে যায়।
পুকুরের পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পুকুরের গভীরতা বৃদ্ধি করা যায়। শীতকালেও
পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এতে মাছদের জন্য অসুবিধা হয় এবং মাছ উপরে এসে
হাপি খেতে থাকে। মাসের এই সকল অক্সিজেনের অভাব থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এয়ার
কেয়ার বা অক্সিজেন মেশিন পুকুর স্থাপন করা উচিত।
শীতকালে মাছ কম খাদ্য খায় এই কারণে মাছকে কম খাবার দিতে হবে নয়তো মাছের অবশিষ্ট
খাবার গুলো মাটির নিচে জমা হবে এবং সেটি গ্যাস আকারে বুদবুদ হয়ে উপরে উঠবে এবং
যা মার্চের শরীরের জন্য ক্ষতিকর যারা মাছকে মেরে ফেলতে পারে।
শীতকালে মাছের পুকুরের পানির মাত্রার ph ৬.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে রাখতে হবে। পানির
পরিচর্যার জন্য কিছু জৈব ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে যা পুকুরের পানিকে ঠিক রাখবে। শীতে
কোন মাছ চাষে লাভ বেশি এটা জানার আগে শীতে মাছ চাষ পদ্ধতি।চলুন এখন আমি আপনাকে শীতে মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাই।
শীতে মাছ চাষ পদ্ধতি
শীতকালে মাছ চাষের ক্ষেত্রে কয়েকটি পদক্ষেপ অবলম্বন করা দরকার হয় কারণ শীতকালে
আবহাওয়া ঠাণ্ডার কারণে মাছের খাদ্য গ্রহণ ক্ষমতা কমে যায় ফলে মাছের বৃদ্ধিও কমে
যায়। চলুন আমি আপনাকে শীতের মাস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানায়।
শীতকালে পুকুরের পানির গভীরতা একটু বেশি রাখার চেষ্টা করতে হবে কারণ শীতকালের
তাপমাত্রার কারণে মাছগুলো পানির নিচে থাকার চেষ্টা করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় হলো শীতকালে পানির তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হবে।
পুকুরের পানির তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা আমাদের জন্য খুবই
উপকারী । ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য পুকুরের উপর
খড়,শাকসবজি জাতীয় যা মাছের আহারযোগ্য তা বিছিয়ে রাখতে হবে।
শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কম থাকার কারণে পানিতে অক্সিজেন দ্রবীভূত হতে সময় লাগে
এর কারনে মাছের শ্বাস-প্রশ্বাস অসুবিধা হতে পারে ফলে মাছ মারা যেতে পারে এর জন্য
পুকুরের ভেতরে এয়ার টিআর ব্যবহার করতে হবে নয়তো প্রতিদিন না আধা ঘন্টা থেকে ৩০
মিনিট বাদ দিয়ে বা সাঁতার কেটে পুকুরের পানির অক্সিজেন বাড়াতে হবে।
এতে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। শীতকালে মাছের খাদ্য ক্ষমতা কমে যায় এর কারণে
মাছকে দিনে একবার খাবার দিলেই যথেষ্ট হয়। মাছকে অতিরিক্ত খাবার দিলে খাবার গুলা
মাছ খেয়ে ফেলতে পারে এবং মাছের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে ।
শীতকালে মাছ সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অসুস্থ হয়ে যায় যার ফলে প্রতিনিয়তই
মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। মাছের পরিচর্যার পাশাপাশি আপনার জানা থাকতে
হবে শীতে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি। এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনি
সেই বিষয়ে জানতে পারবেন।
শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম
শীতকালে মাছ চাষ করা একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। শীতকালে মাছ চাষের প্রত্যেকটি
নিয়ম আপনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে হবে । তাই চলুন আপনাকে জানাই শতক প্রতি মাছ
ছাড়তে হবে কতটি এবং কিভাবে।
পূর্বে আপনাকে আপনার পুকুরের পানির ph ঠিক করতে হবে যাতে করে মাছদের বসবাসের জন্য
বা মাছ চাষের জন্য আপনার সুবিধা হয়। পুকুরের পানি বা পুকুরটির মাছ চাষের জন্য
উপযোগী হলে তারপরে আপনাকে ধীরে ধীরে মাছ ছাড়তে হবে।
যদি কার জাতীয় মাছ হয় যেমন রুই, মৃগেল, কাতলা ইত্যাদি তাহলে আপনার উচিত শত কোটি
আশে থেকে এক কোটি মাছ ছাড়া। তেলাপিয়া মাছ ১৫০ থেকে ২০০ টি। কৈ মাছ হলে শতক প্রতি
২০০ থেকে ২৫০ টি পোনা ছাড়তে পারেন। যদি পাবদা মাছ চাষ করার ইচ্ছা থাকে
সেক্ষেত্রে পাবদা মাছ এর পোনা 250 থেকে 300 টি ছাড়তে পারেন শতকে।
এক শতকে যদি শিং ও মাগুর মাছ চাষ করতে চান তবে ৩০০ থেকে ৪০০ টি কোন একত্রে ছাড়তে
পারেন কারণ শিং ও মাগুর মাছ এই জাতীয় মাছগুলো একসাথে বসবাস করতে বা ঘন হয়ে
বসবাস করতে পছন্দ করে। রুই, কাতলা, এবং মৃগেল একত্রে চাষ করলে রুই ৫০%, কাতলা
২৫%, এবং মৃগেল ২৫% অনুপাতে পোনা ছাড়া উচিত।
পোনা ছাড়া আর গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে তা হল
মাছ পুকুরে ছাড়ার আগে অবশ্যই পুকুরের পানিতে অন্য একটা পাত্রে রেখে ২০-২৫ মিনিট
আপনার পুকুরের পানির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে যাতে করে মাছ সুস্থ থাকতে পারে।
এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম শত প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম ।একটু পরে আমি আপনাকে
জানাবো শীতে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি৷
মাছ দ্রুত বৃদ্ধির ঔষধ
শীতকালে মাছের সম্পূরক খাদ্য ও শীতকালে কিছু ওষুধ সরবরাহ করে মাছকে খুব
তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি করা যায়। চলুন আপনি আপনাকে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি করার কয়েকটি
ওষুধ সম্পর্কে জানায়।
- ১.ভিটামিন ও খনিজ সম্পূরকঃ ভিটামিন সি ভিটামিন ই ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ খাদ্য মাঝের বৃদ্ধি ও মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এতে করে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করে। এছাড়াও মিনারেল ক্যালসিয়াম ইত্যাদি মাছের মাংস ও মাছের হাড় কে বর্ধন করে।
- ২. প্রোবায়োটিকঃ প্রোবায়োটিক ব্যবহার করলে মাছের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি মাছের পেটের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হাত থেকে রক্ষা করে এবং মাছ দ্রুত বর্ধনশীল হয়।
-
৩. এনজাইমঃ মাছের এনজাইম কমে গেলে মাছের খাদ্য গ্রহণ ক্ষমতা কমে যায়
ফলে মাছ এর বৃদ্ধি তে প্রভাব পড়ে। এর জন্য বাজারে মাছের এনজাইম বৃদ্ধির জন্য
কিছু ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
- ৪. সম্পুরক খাদ্য হিসাবেঃ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন আলগা এবং কেলপ মাছের দ্রুত বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। এতে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজ থাকে, যা মাছের দেহের পুষ্টি চাহিদা মেটায়।
- উপরের এ ওষুধগুলো ছাড়াও আরো কিছু ওষুধ রয়েছে যা বাজারে পাওয়া যায় তা হলো ভাইটাপল, এফিশ ফিড প্রিমিক্স,এমুইনো পাউডার,অ্যাকুভিট,প্রোমিনো, ভিটামিকেয়ার,অ্যাকুামিন ইত্যাদি
আপনাকে মাছ দ্রুত বৃদ্ধির কয়েকটি ওষুধ সম্পর্কে জানালাম। শীতে কোন মাছ চাষে লাভ
বেশি এই বিষয়ে জানতে নিচে স্ক্রল করুন।
শীতে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি
শীতে মাছ চাষ করতে মাছ চাষীদের খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয় তবে কিছু কিছু মাছ আছে
যেগুলো চাষ করলে শীতে অনেক হবেন হওয়া যায়। চলুন আমি আপনাকে এখন জানাবো শীতে কোন
মাছ চাষে লাভ বেশি হয়। শীতকালে নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু মাছ চাষে লাভবান হওয়া
যায়। যেমন;
- তেলাপিয়াঃ তেলাপিয়া মাছ শীতে বর্ধনশীল একটি মাছ। এ মাছটির পোনা সহজেই শীতে বৃদ্ধি লাভ করে। আর এই তেলাপিয়া মাছ ছোট জলাশয়ে চাষ করা যায় এবং শীতে মাছটির চাহিদা বাজারে অনেক বেশি থাকে এই কারণে এই মাছ চাষে অনেক লাভবান হওয়া যায়।
- কইঃ কই মাছ অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি মাজা বাজারে অনেক চাহিদা সম্পন্ন শীতে মানুষ সাধারণত এই মাছটি খাওয়ার চেষ্টা করে। কারণ এটি শীতকালে শরির কে উষ্ণ রাখে। এই কারণে শীত কালে কই মাছ চাষ করা উচিত।
- মাগুরঃ সাগর মার শীতকালে চাষে একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে কারণ প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে। না মাগুর মাছের চাহিদা সবসময় বাজারে থাকে কারণ এটি অনেক পুষ্টি যোগায় এবং রক্ত উৎপন্ন করে। এর জন্য শীতকালে এই মাছটি চাষ করা উচিত
- পাবদাঃ পাবদা মাছ শীতকালে একটি জনপ্রিয় মাছ এবং এর মূল্য বাজারেও অনেক উচ্চ থাকে। যদিও শীতকালে চাষ করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। শীতকালে মাস্তি কাজ করলে আপনি অনেক লাভবান হবেন।
- শিং মাছঃ শিং মাছের চাহিদা বাজারে অনেক বেশি এবং একটি পুষ্টিকর মাছ। যেটি আমাদের পূরণ করে এবং বাজারে এর মূল্য অনেক বেশি। এই শিং মাছ যে কোন পরিস্থিতি পেয়ে যে কোন আবহাওয়া টিকে থাকতে পারে এর জন্য শীতকালে শিং মাছ চাষ করা উচিত তাহলে আপনি অনেক লাভবান হবেন।
- গলদা চিংড়িঃ শীতকালে চাষ করার জন্য একটি উপযোগী মাস হলো গলদা চিংড়ি মাছ। এ মাস শীতকালে চাষ করা লাভবান হওয়া যায় এবং শীতকালে মাছটি কম জায়গায় অনেক পরিমাণে চাষ করা যায়।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে জানিয়েছি শীতে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি হয়। আশা করি
এই আর্টিকেলটি পরে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে
আপনার বন্ধুদের শেয়ার জানিয়ে দিন এবং নিয়মিত এরকম প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে
জানতে প্রতিদিন একবার হলেও ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url