কবরের আজাব কেমন হবে - কবরের আজাব থেকে মুক্তির উপায়
মানব জীবনের শেষ ঠিকানা হলো কবর । সকল মানব কে কবরে যেতে হবে এবং দুনিয়াতে যে
যেমন কাজ করবে তেমন ভোগ শাস্তি ভোগ করবে । এই আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি
জানতে পারবেন কি কি কারণে কবরে আজাব হয় ?
এছাড়াও জানতে পারবেন কি কি কারণে কবরে আজাব হয় ,কবরের আজাব কিভাবে হয়? , কবরের
আজাব সম্পর্কে আয়াত, কবরের আজাব কেমন হবে , কবরের আজাব থেকে মুক্তির উপায় ।
ভুমিকা
একদিন পৃথিবীর সকল প্রাণীকেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে কবরের
জীবন বরযখ নামে পরিচিত। মৃত্যুর পরপরই মানুষের এই যাত্রাটি শুরু হয়। এই জীবনে
কিছু মানুষ শান্তি লাভ করে আবার কিছু মানুষ পাও শাস্তি বা আজাব।
কবরের আজাব হলো পাপীদের জন্য একটি শাস্তি যা মৃত্যুর পর পরই শুরু হয় কিয়ামত
অব্দি অপেক্ষা করা হয় না। কোরআন ও হাদিসে এই কবরের আজাব বা কবরের শাস্তি
সম্পর্কে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
আপনি যদি জানতে চান কবরের আজাব কেমন হবে তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় ক্লিক করেছেন।
আশা করি এ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি কবরের আজাব কেমন হবে এই সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কি কি কারণে কবরে আজাব হয়
মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। যেন আমরা তার
আনুগত্য করি এবং তার প্রশংসা করি এবং তিনি তার বিনিময়ে আমাদেরকে দিবেন
অনন্তকালের জান্নাত বানানন্তকালের শান্তি।
কিন্তু যদি আমরা তার অবাধ্য হই কিংবা পাপ কাজে লিপ্ত হয় তাহলে আমরা পাব মৃত্যুর
পরবর্তী জীবনে অশান্তি যার শুরু এই কবর থেকে এখন আমি আপনাকে জানাবো কি কি কারণে
কবরের আজাব হয়।
আরো পড়ুনঃ
ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায়
নামাজ না পড়াঃ মহান রাব্বুল আলামিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের মেরাজের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বা নামাজ
ফরজ করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়েছেন
নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে আমাদেরকে বিরত রাখে ।
মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন আমরা যদি নামাজ না পড়ি
তাহলে কবরে আমাদের শাস্তি পেতে হবে।
মিথ্যা বলাঃ আমরা মিথ্যা বলা কে ছোট মনে করলেও মিথ্যাই কিন্তু সকল পাপের মূল।
একটা মিথ্যা কথা বললে সেই মিথ্যা কথা ঢাকার জন্য সে মিথ্যা কথা লুকানোর জন্য আরও
অনেকগুলো মিথ্যা কথা বলা লাগে এবং এই থেকে আস্তে আস্তে মানুষ অনেক খারাপ কাজে
জড়িয়ে পড়ে। মিথ্যা কথা বললেই এই কারণে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে একটা
কবরের শাস্তি দেবেন
পবিত্রতা রক্ষা না করাঃ পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। মুসলমানদের জন্য নামাজ পড়া যেমন
ফরজ সেই কারণে মুসলমান কি সব সময় পাক-পবিত্র থাকতে হবে না হলে তার কাছে কোন
ফেরেশতা আসবেনা। আর পবিত্রতা না রাখলে আল্লাহতালা সেই ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না
এবং সেই ব্যক্তিকে কবরের জীবনের শাস্তি দেবেন ।
সুদ ও ঘুষ খাওয়াঃ সুদ ও ঘুষ খাওয়া একটি গর্হিত মন্দ কাজ। মহান রাব্বুল আলামিন
আমাদের জন্য ব্যবসাকে হালাল করেছেন সুদ ও ঘুষ কে করেছেন হারাম। সুদ ও ঘুষ খেলে
আপনি কবরে শাস্তি পাবেন।
পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়াঃ পিতা-মাতার গুরুত্ব কুরআন মাজিদের অনেক জায়গায় অনেক
আয়াত রয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন পিতামাতাকে সম্মান ও পিতামাতার কথা শোনার জন্য
আমাদেরকে বলেছেন পিতা-মাতা যদি অমুসলিম হয় তারপরেও তাদের কথা শুনতে হবে। আপনি
যদি এ কথার অবাধ্য হন তাহলে আপনি অবশ্যই কবরে শান্তি পাবেন
উপরোক্ত আলোচিত বিষয় গুলোর কারণে কবরে আজাব হয় এছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে
যেগুলার কারনে কবরে আজাব হয় সে বিষয়গুলো আমি আপনাকে জানালাম একটু পরে আমি
আপনাকে জানাবো কবরের আজাব কেমন হবে।
কবরের আজাব কিভাবে হয়
কবরের আজাব সম্পর্কে বিভিন্ন রকম হাদিস রয়েছে। বিভিন্ন বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্ন
মতামত এসেছে সেই মতগুলো কয়েকটি একত্রিত করে আমি আপনাকে জানাবো কবরের আজাব কিভাবে
হয়।
কবরের আজাব কেমন হবে এটি জানার আগে আপনার কবরের আজাব কিভাবে হয় এ সম্পর্কে জানা
উচিত। এতে বলা হয়েছে কবর এর যে চাপ দেওয়া হবে তা মানুষের জন্য অনেক
যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টদায়ক হবে।
যা মানুষের সহ্য সীমার বাইরে চলে যাবে এবং মানুষের হাড় সবগুলা ভেঙ্গে যাবে। কিছু
কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায় যে সাপ ও বিচ্ছুর আক্রমণের ফলে মানুষের শরীর ক্ষত
বিক্ষত হয়ে যাবে এবং কেয়ামত পর্যন্ত এসে সাপ ও বিচ্ছু তাদের দংশন করতে থাকবে।
আরো পড়ুনঃ
ব্রেন ঠান্ডা রাখার ইসলামিক উপায়
কিছু কিছু বর্ণনায় এমন এসেছে যে কবরের মধ্যেও পাপিষ্ঠদের আগুনের ব্যবস্থা রয়েছে
এবং তারা আগুনের শাস্তি ভোগ করবে এবং তারা ভীতি এবং অস্থিরতা অনুভব করবে এবং তারা
অনুতাপ করবে যে কেন আমরা পৃথিবীতে ভালো কাজ করলাম না।
কবরের আজাব সম্পর্কে আয়াত
কোরআনুল কারিমের কবরের আজাব সম্পর্কে সরাসরি অনেক বিবৃতি সহ আয়াত রয়েছে। এই
আয়াত থেকেও ধারণা পাওয়া যায় কবরের আজাব কেমন হবে।চলুন আমি আপনাকে কয়েকটা
সম্পর্কে জানাই।
اَلنَّارُ یُعۡرَضُوۡنَ عَلَیۡهَا غُدُوًّا وَّ عَشِیًّا ۚ وَ یَوۡمَ تَقُوۡمُ
السَّاعَۃُ ۟ اَدۡخِلُوۡۤا اٰلَ فِرۡعَوۡنَ اَشَدَّ الۡعَذَابِ
অর্থঃ সকাল সন্ধ্যায় তাদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুনের সম্মুখে এবং যেদিন কেয়ামত
সংঘটিত হবে সেদিন বলা হবে ফেরাউন সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ করো কঠিনতম শাস্তিতে (সূরা
আল-মুমিন (৪০:৪৬)
وَ مِمَّنۡ حَوۡلَكُمۡ مِّنَ الۡاَعۡرَابِ مُنٰفِقُوۡنَ ؕۛ وَ مِنۡ اَهۡلِ
الۡمَدِیۡنَۃِ ۟ۛؔ مَرَدُوۡا عَلَی النِّفَاقِ ۟ لَا تَعۡلَمُهُمۡ ؕ نَحۡنُ
نَعۡلَمُهُمۡ ؕ سَنُعَذِّبُهُمۡ مَّرَّتَیۡنِ ثُمَّ یُرَدُّوۡنَ اِلٰی عَذَابٍ
عَظِیۡمٍ -
অর্থঃ আর তোমাদের আশেপাশের আরব বেদুঈনদের মধ্যে এবং মদীনাবাসীদের মধ্যেও কিছু
মুনাফিক রয়েছে, যারা কপটাচার করে। তুমি তাদের জানো না; আমি তাদের জানি। আমি
তাদেরকে দুবার শাস্তি দেব, তারপর তারা কঠিন শাস্তির দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ كَذِبًا اَوۡ قَالَ اُوۡحِیَ
اِلَیَّ وَ لَمۡ یُوۡحَ اِلَیۡهِ شَیۡءٌ وَّ مَنۡ قَالَ سَاُنۡزِلُ مِثۡلَ مَاۤ
اَنۡزَلَ اللّٰهُ ؕ وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذِ الظّٰلِمُوۡنَ فِیۡ غَمَرٰتِ الۡمَوۡتِ
وَ الۡمَلٰٓئِكَۃُ بَاسِطُوۡۤا اَیۡدِیۡهِمۡ ۚ اَخۡرِجُوۡۤا اَنۡفُسَكُمۡ ؕ
اَلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡهُوۡنِ بِمَا كُنۡتُمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی
اللّٰهِ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ كُنۡتُمۡ عَنۡ اٰیٰتِهٖ تَسۡتَكۡبِرُوۡنَ
অর্থঃতার থেকে বড় জালিম আর কে যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা রচনা করে অথবা বলে
আমার প্রতি ওয়াহি নাযিল হয় যদিও তার কাছে কিছুই অবতীর্ণ হয় না আর যে বলে
আল্লাহ যা নাযিল করেন আমি শীঘ্রই তার অনুরূপ নাজিল করব। হায় যদি তুমি ওই ডালিম
দের দেখতে পেতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকবে আর ফেরেশতারা হাত
বাড়িয়ে দিয়ে বলবে তোমাদের দানগুলোকে বের করে দাও। আজ তোমাদেরকে অবমাননা করা
আজাব দেওয়া হবে যেহেতু তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলতে যা প্রকৃত সত্য নয়
আর তার নিদর্শন গুলোর ব্যাপারে অদ্ধত্য প্রদর্শন করতে।সূরা আল-আন'আম (৬:৯৩)
আমি আপনাকে কবরের আজাব সম্পর্কে তো কয়েকটি আয়াত সম্পর্কিত জানালাম এখন আমি
আপনাকে জানাবো কবরের আজাব কেমন হবে।
কবরের আজাব কেমন হবে
কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারি কবরের আজাব কেমন হবে। চলুন আমি আপনাকে এখন
সে সম্পর্কে জানায়।
১. মুনকার ও নাকিরের প্রশ্নঃ মৃত্যুর পরেই আপনার দাফন কাফন শেষ হলে কবরের প্রথম
দুটি ফেরেশতা আসবে মুনকার ও নাকির। তারা এসে আপনাকে তিনটা প্রশ্ন করবে আপনি
উত্তির না দিতে পারলে শুরু হবে আপনার কবরের আজাব।
আরো পড়ুনঃ
তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল
২. কবরের চাপঃ হাদিস শরীফে এসেছে যে সকল মানুষকে কবরের চাপ সহ্য করতে হবে তবে
যারা বেশি পাপ করেছে দুনিয়ায় তারা এমনভাবে সহ্য করবে যাতে যাতে করে মনে হবে
তাদের হাড়গোড় সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যদিও সকল মানুষকেই কবরের চাপ সহ্য
করতে হবে তবে ভালো মানুষের ক্ষেত্রে কবরের চাপ কম হবে এবং পাপিষ্ঠদের ক্ষেত্রে
কবরের চাপ বেশি হবে।
৩.আগুনের শাস্তিঃ কিছু কিছু হাদিসে এসেছে পাপিষ্ঠদের কবরের ভিতর বারবার আগুনে
পোড়ানো হবে এবং তা আবার আগের মতো করে দেওয়া হবে এবং আবার আগুনে পোড়ানো হবে
এভাবেই কেয়ামত অবধি তাদের শাস্তি চলতে থাকবে।
৪.গরম ও ঠান্ডা বাতাসঃ কবরের মধ্যে ভালো মানুষের জন্য যারা দুনিয়াতে ভাল কাজ করে
গেছেন তাদের জন্য ঠান্ডা বাঁধার প্রবাহিত হবে এবং যারা পাপ কাজ করে গেছে তাদের
জন্য গরম বাতাস প্রবাহিত হবে।
৫.চরম অন্ধকার ও সাপ বিচ্ছুঃ কবরের ভিতর চরম অন্ধকার এবং সাপ বিচ্ছুদের দ্বারা
আক্রান্ত হবে যারা দুনিয়াতে অসংখ্য পরিমাণে পাপ কাজ করেছে।
এতক্ষণ আমি আপনাকে জানালাম কবরের আজাব কেমন হবে চলুন এখন জানাই কবরের আজাব থেকে
মুক্তির উপায় সম্পর্কে।
কবরের আজাব থেকে মুক্তির উপায়
মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন আল-কোরআনকে।
এবং হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে তার নবী ও রাসূল করে পাঠিয়েছেন আমাদের পথ প্রদর্শন ও
হেদায়েতের জন্য। চলুন আমরা কোরআন ও হাদিস থেকে জানি কবরের আজাব থেকে মুক্তির
উপায়।
আরো পড়ুনঃ
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় জানুন
১.কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া সর্বোত্তম উপায় হলো নামাজের প্রতি যত্নশীল
হওয়া।
২. হাদিস শরীফে এসেছে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন ঘুমানোর আগে
সূরা মূলক তেলাওয়াত করা।
৩.আল্লাহু আল্লাহর রাসূলের অনুসরণ করা ।
৪.প্রতিনিয়ত আল্লাহর জিকির করা এবং আল্লাহতালার কাছে তওবাও ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৫. সব সময় সৎকর্ম করা এবং আল্লাহ তায়ালার পথে চলা। এবং মানুষকে আল্লাহ তাআলার
পথে চলতে আহ্বান করা।
৬. সব সময় মানুষকে জান্নাতের পথে দাওয়াত দেওয়া এবং নিজে তা পালন করা।
৭.সর্বদা আল্লাহর ভয় অন্তরে রাখা এবং সর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে কি কি কারণে কবরে আজাব হয় কবরের আজাব কিভাবে হয়? ,
কবরের আজাব সম্পর্কে আয়াত, কবরের আজাব কেমন হবে , কবরের আজাব থেকে মুক্তির উপায়
।
আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি আপনার মনের ভেতরে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এইরকম তথ্যসম্বলিত ও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url