তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল - দোয়া কবুলের অস্ত্র

আমাদের জীবনের দোয়া হলো মহান রবের সাথে যোগাযোগের অন্যতম একটি মাধ্যম হলো দোয়া করা । দোয়া হলো মুমিনের শক্তি । আমরা সকলে চাই আমাদের দোয়া যেন কবুল হয় । এই আর্টিকেল টি তে আমি আপনাকে জানাবো কিভাবে দোয়া করলে তাড়াতাড়ি কবুল হবে ।
দোয়া করার পদ্ধতি

এছাড়াও জানাবো দোয়া করার পদ্ধতি, দোয়া কবুলের অস্ত্র ,দোয়া কবুলের ইস্তেগফার ,দোয়া কবুল হওয়ার আয়াত ও তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত ।

ভুমিকা

জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই অথবা বিভিন্ন রকমের জিনিস আমাদের প্রয়োজন হয়। এই সময় আমরা একমাত্র আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছেই হাত তুলে দোয়া করি।ইসলামের দৃষ্টিতে দোয়া হলো এমন একটি মাধ্যম যেটির দ্বাড়া মহান রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব।

আমাদের দোয়া কবুল হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। আপনি হয়তো অনেক জায়গায় তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে জানতে সার্চ করেছেন কিন্তু পাননি যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আর্টিকেল শুধুমাত্র আপনার জন্য।

দোয়া করার পদ্ধতি

দোয়া মুমিনের অস্ত্র। দোয়া করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। চলুন দোয়া করার কয়েকটি গুছানো পদ্ধতি সম্পর্কে আমি আপনাকে জানাই - দোয়া করার পদ্ধতি

দোয়া করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে পবিত্র থাকা। দোয়া করার পূর্বে ওযু বা গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করার দোয়া কবুলের একটি পূর্ব শর্ত। দোয়া করার শুরুতে সর্বপ্রথম মহান রাব্বুল আলামিন এর প্রশংসা করা এবং রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর দরুদ পড়া। দোয়া কবুলের অস্ত্র হলো দরুদ পড়া ।

দোয়া করতে হবে আন্তরিকতার সাথে এবং বিনম্রতার সাথে মহান রব্বুল আলামীনের কাছে ছোট বাচ্চার মত কেঁদে কেঁদে নির্দিষ্ট জিনিস চাইতে হবে যেন মহান রব্বুল আলামীন আমাদের উপর খুশি হয়ে সে জিনিসটি আপনাকে দান করেন।
দোয়া করার সময় সর্বপ্রথম মহান রাব্বুল আলামিনের উপর পুর্ণ আস্থা রাখতে হবে;দোয়া এমনভাবে করতে হবে যেন বিশ্বাস থাকতে থাকে যে মহান রব্বুল আলামীন আপনার এই দোয়াটি কবুল করবেন । দোয়া করার কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জুমার দিন তাহাজতের সময় ফজরের নামাজের পর মাগরিবের নামাজের পর আজান ও ইকামতের মাঝখানে।

দোয়া করা শেষ হয়ে গেলে দোয়া শেষে আমীন বলা সুন্নত। দও একবার করেই থেমে থাকা যাবে না বরং বারবার দোয়া করে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে চাইতে হবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে অবশ্যই তিনি সঠিক সময়ে আপনার এই দোয়াটি কবুল করবেন। এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাকে তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

দোয়া কবুলের অস্ত্র

দোয়া হলো এমন একটি মাধ্যম যাতে করে মহান রাব্বুল আলামিনের নতুন নৈকট্য অর্জন করা যায় এবং মহান রব্বুল আলামীন আমাদের এই দোয়াগুলো কবুল করেন। আর্টিকেলটিতে তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে জানাবো তার আগে চলুন দোয়া কবুলের অস্ত্র সম্পর্কে আপনাকে জানাই-

দোয়া কবুলের প্রথম শর্ত ও অস্ত্র হচ্ছে মহান রব্বুল আলামীনের উপর বিশ্বাস রাখা তিনি আপনার এই দোয়াটি কবুল করবেন। এ বিশ্বাস না থাকলে কখনো সে দোয়াটি কবুল হবে না।

আপনার দোয়াটি হতে হবে আন্তরিকভাবে এবং আপনার অন্তরের অন্তস্থল থেকে যাতে করে সে দোয়াটি মহান রব্বুল আলামীনের কাছে হৃদয় স্পর্শে হয়। দোয়ার সময় সব সময় বিনয় ও নম্রতা প্রদান করতে হবে যাতে করে মহান রব্বুল আলামীন খুশি হন। 
দোয়া করার অন্যতম অস্ত্র হলো আপনার পূর্বের সকল গুনাহ এর জন্য আপনাকে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং তওবা করতে হবে যে এরকম গুনাহ আপনি আর ভবিষ্যতে কোনদিন করবেন না ।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দোয়া ও কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করার মাধ্যমে অনেক দোয়া কবুল হয়। এগুলোই হলো সাধারণত দোয়া কবুলের অস্ত্র ।

দোয়া কবুলের ইস্তেগফার

দোয়া কবুলের জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার আমার ও সকল মুসলিম উম্মার জন্য কয়েকটি ইস্তেগফার উপহার দিয়ে গেছেন যাতে করে আমরা মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে পারি -

তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে আমি আপনাকে একটু পরে জানাবো তার আগে আমি আপনাকে দোয়া কবুলের ইস্তেগফার সম্পর্কে জানাই চলুন -

ইফেকফার শব্দের অর্থ হল মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং বিনয়ী হওয়া। সর্বোত্তম হলো “আস্তাগফিরুল্লাহ” এর অর্থ হলো আমি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। শব্দটি অনেক ছোট হলেও মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে এই শব্দটি অনেক পছন্দ এই শব্দটি আল্লাহ তায়ালা অনেক বেশি পছন্দ করে থাকেন। এই দোয়া বারবার পড়লে আল্লাহর নয় ফটো লাভ করা যায়।
দোয়া কবুলের ইস্তেগফার


সর্বোত্তম ইস্তেগফার হলো-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّأَنْتَ

অর্থঃ আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর আছি।
আরেকটি ইস্তেগফার হলোঃ
- أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ

অর্থঃ আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই ফিরে আসি।

ইস্তেগফারের সাথে বিনয় ও নম্রতা মিশিয়ে প্রতিদিন ১০০ বার এই দোয়া পাঠ করুন । আমি আপনাকে দোয়া কবুলের ইস্তেগফার সম্পর্কে জানালাম; তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে জানতে নীচে স্ক্রল করুন।

দোয়া কবুল হওয়ার আয়াত

দোয়া কবুল হওয়ার জন্য মহান রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারীমে কয়েকটি স্পেশাল দোয়া আমাদের জন্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যে স্পেশাল কয়েকটি সূরা হল ‘সূরাতুল ফাতিহা’’ এই সূরা কে উম্মুল কুরআন বলা হয় অর্থাৎ কুরআনের মা । এই সূরার মধ্যে মহান রাব্বুল আলামিন দোয়া কবুলের লুকায়িত তথ্য রেখেছেন। এছাড়াও

মহান রাব্বুল আলামিন সূরা আল বাকারার ১৮৬ নাম্বার আয়াতে বলেছেন -
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ-

অর্থঃ আর যখন আমার বান্দারা তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন বলো, নিশ্চয়ই আমি কাছে আছি। আমি ডাক্তার ডাকলে তার ডাক শোনে।
মহান রাব্বুল আলামিন সূরা আল বাকারার ২০১ নম্বর আয়াতে বলেছেন -
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-

অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং পরকালেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন

মহান রব্বুল কোরআনুল কারিমের অন্য এক জায়গায় বলেছেন-
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ-
অর্থঃ হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে যা কিছু কল্যাণ দিয়েছ, আমি তার জন্য প্রয়োজনমুক্ত নই।

এছাড়াও সূরা তোহার ১১৪ নম্বর আয়াত, সূরা আলে ইমরানের ১৭৩ নাম্বার আয়াত,সূরা আল কাসাস এর ২৪ নম্বর আয়াত,সূরা কাফিরুন, সূরা ফালাক ও সূরা নাসকে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের জন্য দোয়া কবুলের স্পেশাল সূরা বা আয়াত হিসাবে নাযিল করেছেন।

এতক্ষণ আমি দোয়া কবুলের আয়াত সম্পর্কে আপনাকে জানাচ্ছিলাম এখন আমি আপনাকে জানাবো তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল।

তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআনের ব্যাখ্যা ও হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। সেগুলো এখন আমি আপনাকে জানাবো -

১.ইখলাসঃ দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে ইখলাস আন্তরিকতা। আমরা যেমন কোন ব্যক্তির কাছে কোন কিছু চাইলে বিনয়ী হয়ে চাই। তেমনি মহান রব্বুল আলামীন বা আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে কোনো কিছু চাইলে প্রথমে আমাদের অন্তরের ভেতর ইখলাস বা আন্তরিকতা নিয়ে আসতে হবে এবং তারপরে তার কাছে প্রার্থনা করতে হবে।

২. আল্লাহর প্রশংসা ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরুদঃ আমরা মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে কোন কিছুর দুয়া বা প্রার্থনা করলে আমরা সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করবো এবং মহানবী সাঃ এর উপর দরুদ পড়বো। এটি এ দোয়া কবুলের একটি সুন্দর মাধ্যম ও পন্থা।
তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল


৩.নির্দিষ্ট সময় দোয়া করাঃ দোয়া করার জন্য ইসলামে আমাদের জন্য কয়েকটি বিশেষ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন তাহাজ্জুদের শেষ অংশে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় তাড়াতাড়ি। মাসে ইফতার করার আগে,ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে সকল প্রকার দোয়া কবুল করা হয়।আজান ওইকামতে সময় দোয়া কবুল হয়। বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়। জুমার দিনে দোয়া কবুল হয়।
৪. হালাল খাবার ও দান সদকাঃ দোয়া কবুল হওয়ার পূর্ব আরেকটি শর্ত হচ্ছে হালাল খাবার খাওয়া। আপনি যদি এক বিন্দু পরিমাণ হারাম খাবার খান আপনার দোয়া কবুল হবে না। এর জন্য আপনাকে হালাল খাবার খাইতে হবে। এবং প্রতিনিয়ত আপনাকে ছোটখাটো হলেও দানশত্তা করতে হবে মহান রাব্বুল আলামিনের খুশির জন্য।

৫. ধৈর্য ধরাঃ দোয়া করার পরে আপনাকে অস্থির হওয়া যাবে না মহান রাব্বুল আলামিন জানেন যে আপনাকে কাঙ্খিত জিনিসটি কোন সময় দিলে আপনার জন্য ভালো হবে। সেই সময়ই মহান রব্বুল আলামীন আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি দান করেন।

এছাড়াও আপনি কুরআনের বিশেষ বিশেষ আয়াত তেলাওয়াত করে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে পারেন। চোখের পানি ফেলে বাচ্চাদের মত কেঁদে কেঁদে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করলে মহান রাব্বুল আলামিন সেটি খুশি মনে গ্রহণ করেন এবং আপনার দোয়াটি তাড়াতাড়ি কবুল করবেন।

শেষ কথা

এতক্ষন আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম দোয়া করার পদ্ধতি, দোয়া কবুলের অস্ত্র ,দোয়া কবুলের ইস্তেগফার ,দোয়া কবুল হওয়ার আয়াত ও তাড়াতাড়ি দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত ।

আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি আপনার মনের ভেতরে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এইরকম তথ্যসম্বলিত ও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

ads top