রেফারি হওয়ার যোগ্যতা ও কিভাবে সফল রেফারি হওয়া যায় জেনে নিন

ফুটবল বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয় একটি খেলা। আমরা সাধারণত ফুটবল প্লেয়ার হওয়ার চিন্তা করে অনেকে তবে কেউ কেউ আবার ব্যতিক্রমে চিন্তা করে থাকেন যে তিনি ফুটবলের রেফারি হবেন। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি ফুটবলে কিভাবে রেফারি হবেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। 
রেফারি কী ও রেফারির প্রকারভেদ

এছাড়াও এই আর্টিকেলটিতে আপনি জানতে পারবেন,রেফারি কী ও রেফারির প্রকারভেদ, রেফারি হতে হলে কী যোগ্যতা লাগে, কিভাবে রেফারিং শিখবো,পরীক্ষার ধাপ ও সনদপ্রাপ্তি,অভিজ্ঞতা অর্জনের ধাপ ও পেশা হিসেবে রেফারিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

ভুমিকা

ফুটবল বিশ্বের প্রতিটি দেশের একটি জনপ্রিয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ একটি খেলা। এমন কোন দেশ নেই যে ফুটবল খেলাটি খেলেনা। ফুটবল খেলা শুধুমাত্র প্লেয়ার দর্শকদের উপর নির্ভর করে না ফুটবলের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে রেফারি। যার কাজ খেলাটি সম্পন্ন সুষ্ঠ ও ন্যায় সঙ্গত ভাবে পরিচালনা করা।

চলুন এই আর্টিকেল টি থেকে আমি আপনাকে বিস্তারিত জানাই রেফারি কী ও রেফারির প্রকারভেদ,রেফারি হতে হলে কী যোগ্যতা লাগে, কিভাবে রেফারিং শিখবো,পরীক্ষার ধাপ ও সনদপ্রাপ্তি,অভিজ্ঞতা অর্জনের ধাপ ও পেশা হিসেবে রেফারিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

রেফারি কী ও রেফারির প্রকারভেদ

এ আর্টিকেলের শুরুতেই আমি আপনাকে জানাবো রেফারি কী ও রেফারির প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত। রেফারি হল ফুটবলে সেই ব্যক্তি যিনি মাঠে খেলাটি পরিচালনা করে থাকেন এবং খেলার সময় খেলার প্রতিটি নিয়ম পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিচারকের কাজ করেন ।

তিনি নিশ্চিত করেন যে প্লেয়াররা সুষ্ঠু সঠিক নিয়মে খেলছে কিনা কারো প্রতি যদি অন্যায় হয় তাহলে তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খেলার গতি ও খেলোয়াড়দের আচরণের উপর দৃষ্টি রাখেন।

রেফারির কাজ শুধু নয় যে খেলাতে ফাউল পেনাল্টি দেওয়া বরং খেলার মধ্যে বা খেলার শুরুতে মাঠের অবস্থা বলের অবস্থা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেন এবং অতিরিক্ত সময় তিনি নির্ধারণ করেন।

রেফারির প্রকারভেদ

একটি ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করার জন্য কয়েকজন রেফারির প্রয়োজন হয়। মেতের রেফারির প্রকার সম্পর্কে আমি আপনাকে জানাই চলুন।।

১.মূল রেফারিঃ তিনি মূলত খেলাটি পরিচালনা করেন এবং তিনি মাঠের প্রধান রেফারি হিসাবে কাজ করেন, তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হয়৷ মূল রেফারি থাকে একজন।
২.সহকারি রেফারিঃ সহকারী রেফারি দুইজন থাকে দুইজন মাঠের দুই পাশে থাকে ডান ও বাম পাশে। এদের কি সাধারণত লাইন্সম্যান বলা হয় সরকারি রেফারি বাইরে যাওয়া অফাইড, কর্নার ও গোলকিক সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে মুল রেফারি কে সাহায্য করেন।

৩. চতুর্থ রেফারিঃ চতুর্থ রেফারিও একজন থাকে এনার কাজ মাঠের বাহিরে। ইনি শুধুমাত্র মাঠের খেলোয়াড় পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত সময় নির্ধারণ এবং বেঞ্চের প্লেয়ারদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন।

৪. ভিডিও এসিস্টেন্ট রেফারি ( ভিএআর): এটি হলো আধুনিক সংস্করণ এটি শেয়ার পূর্বে ছিল না একটি গত ৪-৫ বছর থেকে ফুটবলে যুক্ত হয়েছে। সাধারণত নির্ভুল রেফারিং এর জন্য রেফারি মাঠের বাইরে থেকে ফুটেজ দেখে গোল লাল কার্ড পেনাল্টি, অফসাইড ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেন এবং মূল রেফারিকে সাহায্য করেন।

এখন আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম রেফারি কী ও রেফারির প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত চলুন আর্টিকেলের পরের অংশে আমি আপনাকে জানাই রেফারি হতে হলে কী যোগ্যতা লাগে?

রেফারি হতে হলে কী যোগ্যতা লাগে

আর্টিকেলের এই অংশে আমি আপনাকে জানাবো রেফারি হতে হলে কী যোগ্যতা লাগে। ফুটবলার হওয়ার থেকে রেফারী হওয়া একটু কষ্টসাধ্য কাজ এর জন্য প্রয়োজন শারীরিক সক্ষমতা মানসিক বুদ্ধি এবং খেলার নিয়ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন। 

একজন ফুটবল রেফারিকে সবসময় বিচক্ষণ ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। চলুন এখন আমি আপনাকে জানাই রেফারি হতে হলে কী যোগ্যতা লাগে;

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী রেফারী হতে হলে সাধারণতম মাধ্যমিক বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। তবে কিছু কিছু দেশের বা কিছু কিছু ফেডারেশন অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা থাকা একটি বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বয়সঃ ফিফার নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত ১৮ বছর বয়স হাওয়া লাগে সর্বনিম্ন রেফারি হওয়ার জন্য। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য রেফারির জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। (তথ্য সুত্র: ফিফা) 
রেফারি হতে হলে কী যোগ্যতা লাগে

শারীরিক ফিটনেসঃ রেফারিকে মাঠে অনেকটা সময় দৌড়ে কাটাতে হয় তাই অবশ্যই রেফারীকে শারীরিকভাবে শক্তিশালী ও ফিট থাকতে হবে এর জন্য নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষা যেমন ইয়ো ইয়ো টেস্ট বা স্প্রিন্ট টেস্ট দিতে হয়। এবং অবশ্যই রেফারির চোখের দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি ভালো হওয়া জরুরী।

ফুটবল নিয়ম সম্পর্কে জ্ঞানঃ ফিফার একটি প্রবন্ধ বা বই আছে যাতে ১৭ টি নিয়ম আছে দ্যা বইটির নাম হচ্ছে ল অফ দ্য গেম। 17 টি নিয়ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হয় শুধু তাই নয় পরিস্থিতি ও নিয়ম গুলো প্রয়োগ করার ক্ষমতাও থাকতে হবে।

রেফারির সনদঃ প্রত্যেক রেফারিকেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বাফুফে অথবা এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন এএফসি অথবা ফিফা অনুমোদিত রেফারি কোর্সে অংশ নিতে হবে।

কোর্স শেষে একটি লিখিত ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হয় উত্তীর্ণ হলে তারপর রেফারিং এর সদস্য এবং সনদ প্রদান করা হয়।

এতক্ষন আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম রেফারি হতে হলে কী যোগ্যতা লাগে চলুন এখন আমি আপনাকে জানাবো কিভাবে রেফারিং শিখবো।

কিভাবে রেফারিং শিখবো

আপনি যদি জানতে চান কিভাবে রেফারিং শিখবো তাহলে এই আর্টিকেলের এই অংশটি শুধুমাত্র আপনার জন্য।একজন ভালো রেফারি হওয়ার জন্য প্রথমত আপনাকে যা করতে হবে তা হলো ফুটবলের নিয়ম গুলো ভালোভাবে জানতে হবে এবং তা মাঠে প্রয়োগ করার ক্ষমতা বা সক্ষমতা থাকতে হবে। 

এর জন্য প্রথমেই আপনি ফিফা এর ল অফ দা গেমের সূত্রটি নিয়ম ভালোভাবে পড়ে এবং তা ব্যবহার বা অনুশীলন করবেন। ফিফা এই নিয়মগুলো অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অথবা ইউটিউবে টিউটোরিয়াল হিসেবে দেখতে পাবেন এগুলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। 
তারপরে অবশ্যই আপনাকে রেফারি কোর্সে ভর্তি হতে হবে রেফারি করছে থাকা অবস্থায় আপনাকে আপনার নিজস্ব দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই স্থানীয় পর্যায়ে রেফারিং শুরু করতে হবে । 

স্থানীয় পর্যায়ে যেমনই আপনার স্থানীয় লিগ স্কুল বা কলেজ টুর্নামেন্ট রেফার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন এখান থেকে অর্জন করেন অভিজ্ঞতা তারপরে সিনিয়র রেফারিদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবেন। 

বর্তমানে ইউটিউবে অথবা ফিফার ওয়েবসাইট রেফারিং কোর্সের জন্য ভিডিও দেওয়া হয়ে থাকে। এবং অবশ্যই আপনাকে ফিটনেস ঠিক রাখতে হবে এবং আপনার চোখের দৃষ্টি এবং কানের শব্দের প্রখরতা খুব ভালোভাবে জ্ঞান থাকতে হবে। 

আমি যদি সংক্ষেপে বলি তাহলে ব্যাপারটি দাড়াচ্ছে হচ্ছে প্রথমে আপনাকে ফিফা নিয়ম গুলো পড়তে হবে তারপরে কোন প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে হবে আপনার নিজস্ব ফিটনেস ঠিক রাখতে হবে স্থানীয় পর্যায়ে ম্যাচ পরিচালনা করতে হবে 

এবং সর্বশেষ যেটা সিনিয়র রেফারিদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য তাদের সাথে কথা বলতে হবে। 

এতক্ষণ আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম কিভাবে রেফারিং শিখবো তা সম্পর্কে চলুন আর্টিকেলের পরের অংশে আমি আপনাকে জানাই পেশা হিসেবে রেফারিং কেমন তা সম্পর্কে বিস্তারিত।

পেশা হিসেবে রেফারিং

আপনি পেশা হিসেবে রেফারিং যদি করতে চান তাহলে অবশ্যই এটি আপনার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তবে এটি আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে কারণ আধুনিক ফুটবল শুধুমাত্র একদিন দুই দিনের নয় এটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বব্যাপী পেশা হিসেবে খুব ভালোভাবে স্বীকৃত।

 বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে রেফারিরা সম্মানজনক বেতন ও অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা এবং পেশাগতম মর্যাদা পেয়ে থাকেন। এমনকি পেশাদার লিগ গুলোতেও রেফারির কদর বর্তমানে অনেকটা বেড়েছে। 
পেশা হিসেবে রেফারিং

আন্তর্জাতিক পর্যায় বিশেষ করে ফিফা ইউএফা কিংবা AFC এর মত প্রতিষ্ঠান দ্বারা রেফারি হিসেবে কাজ করেন তারা বছরে বহু ম্যাচ পরিচালনা সুযোগ পান এর বিনিময়ে অর্থ ও ভ্রমণ ভাতা পেয়ে থাকেন। বর্তমানে বাংলাদেশে ফুটবলের ক্রেজ উঠেছে আপনি চাইলেও ফুটবলার না হয়ে রেফারি হিসেবেও অনেক টাকা আয় করতে পারেন। 
বাংলাদেশের সাধারণত স্থানীয় পর্যায়ে রেফারিদের প্রতি ম্যাচে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং জেলা পর্যায়ে বা বিভাগ পর্যায়ে প্রতি রেফারিকে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা যাতায়াত ও খাবার অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। 

বর্তমানে জাতীয় লিগগুলোতে থাকা ও খাওয়াসহ একজন রেফারীকে ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করার জন্য একজন রেফারি ভ্রমণ ও খাওয়া দাওয়া আবাসন ইত্যাদি সহ প্রতি ম্যাচে ১000 ডলার থেকে ৫০০০ ডলার পর্যন্ত পেয়ে থাকেন।

শেষ কথা

ফুটবল রেফারি খেলার নিয়ম ও নয় রক্ষা করা এর মূল কাজ। এখন আমি আপনাকে জানালাম রেফারি কী ও রেফারির প্রকারভেদ, রেফারি হতে হলে কী যোগ্যতা লাগে,কিভাবে রেফারিং শিখবো ও পেশা হিসেবে রেফারিং কেমন তা সম্পর্কে বিস্তারিত।

আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি আপনার মনের ভেতরে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং এইরকম তথ্যসম্বলিত ও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

ads top