দুর্গা পুজার নিয়ম ২০২৫ - শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস
দুর্গা পুজা বাঙালি হিন্দু দের একটি বড় ও মহৎ অনুষ্ঠান । এ পূজা শুধু
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি । এই আর্টিকেল টি
মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি পুজার ইতিহাস ও নিয়ম কানুন জানতে পারবেন ।
এছাড়াও জানতে পারবেন শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস, দেবী দুর্গার বর্ণনা এবং
দুর্গা পুজার নিয়ম ২০২৫
ভুমিকা
শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ও মহিমান্বিত একটি উৎসব।
প্রতিবছর শরৎকালে দেবী দুর্গার আগমনে ও পূজার মধ্য দিয়ে সারা বাংলাদেশ এবং
ভারতীয় উপমহাদেশ গুলোতে এই উৎসবটি হিন্দুরা অনেক মুখর ভাবে পালন করে থাকে।
হিন্দুরা মনে করেন এই পূজার তাৎপর্য হলো অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভ শক্তির বিজয়
এবং দেবী দুর্গা পৃথিবীতে আগমন করে ভক্তদের কল্যাণ এর জন্য। আর এই আগমনের ফলে
ভক্তরা হয়ে ওঠেন আনন্দিত এবং উৎসবমুখর। দূর্গা পূজা রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস ও
সংস্কৃতি।
এই আর্টিকেলটিতে শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস, দেবী দুর্গার বর্ণনা এবং দুর্গা
পুজার নিয়ম ২০২৫ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো প্রথমেই কোন বিষয় জানতে হলে
অবশ্যই আমাদের উচিত সে বিষয়ে ইতিহাস জানা চলুন তাহলে আমরা সর্বপ্রথম শারদীয়
দূর্গা পূজার ইতিহাস দিয়ে জানা শুরু করি।
শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস
প্রতিটি প্রতিটি উৎসব এবং প্রতিটি সংস্কৃতির মাঝে ইতিহাস লুকায়িত রয়েছে। তেমনই
শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাহলে চলুন
আর্টিকেলের প্রথম অংশে শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে আমি আপনাকে জানাই-
দুর্গাপূজার সূচনা প্রাচীন কাল থেকে হলেও এটিই বিশেষ করে জনপ্রিয়তা লাভ করে
মধ্যযুগের পর থেকে। সেই সময়কার হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ অনুসারে তারা মনে করেন দেবী
দুর্গার আবির্ভাব ঘটে ওশুর মহিষাসুর বধের মাধ্যমে এবং দেবী দুর্গা পূর্ণ শক্তি
নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপূজা এর
প্রচলন।
আরো পড়ুনঃনোবেল পুরুস্কার মানে কি ?
আমি আপনাকে জানাচ্ছি শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস , দেবী দুর্গার বর্ণনা এবং
দুর্গা পুজার নিয়ম ২০২৫
প্রথম দিকে দুর্গা পূজা সাধারণত বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হতো। কারণ সেই সময় অনেক
হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইদের চিকেন পক্স অথবা বাসন্তী রোগ হতো যেটাকে আমরা বসন্ত
রোগও বলে থাকি। সেই কারণে সেই সময়কার রাজা এটাকে বাসন্তী পূজা নামকরণ করেন আবার
অনেক বর্ণনায় বলা হয়েছে এটি বসন্তকালে হয়তো যার ফলে এটিকে বাসন্তী পূজা বলা
হয়। এটা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে।
তবে কিংবদন্তি মতে, অযোধ্যার রাজা রামচন্দ্র রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়লাভ
করেন যার ফলে তিনি শরৎকালে দুর্গাপূজা শুরু করেন। এবং তিনি দেবীকে সন্তুষ্ট করতে
108 টি নীল পদ্ম প্রদান করেন তবে সেই মুহূর্তে একটি পদ্ম কম পড়ে যায়।
তখন ভক্তি ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে রাজা রামচন্দ্র নিজের চোখকে নিদর্শন রূপে দেবির
নীল পদ্ম হিসেবে দেবিকে প্রদান করেন। তার এই নিষ্ঠার কারণে দেবী সন্তুষ্ট হয়ে
তার জন্য আশীর্বাদ করেন এবং সে যুদ্ধে জয়লাভ করে। তারপর থেকে সাধারণত
দুর্গাপূজার শরৎকালে হয়ে থাকে যার জন্য এই দুর্গাপূজাকে শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব
বলা হয়ে থাকে।
ততদিনে ও দুর্গাপূজা বাংলার ইতিহাসে ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে বাংলার
ইতিহাসে শারদীয় দুর্গাপূজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে প্রায় ১৬শ শতকের দিকে। সেই সময়
বাংলার জমিদার রাজ পরিবার ও ধ্বনি পরিবারগুলোতে মন্দির বাদ দিয়ে তাদের গৃহে
অবস্থিত যে মন্দিরগুলো ছিল সেই মন্দিরে পূজা শুরু হয়।
তখন থেকে জমিদার এবং রাজ পরিবার থেকে পূজা মন্ডপ সাজানো পূজাতে তাদের বাসা
বাড়ি সাজানো ইত্যাদি শুরু হয়। এর পরবর্তী সময়ে ১৮০০ শতকের দিকে কলকাতার একটি
প্রাচীন রাজবাড়ী যার নাম শোভাবাজার রাজবাড়ী এবং এছাড়াও আরো অন্যান্য বাড়িতে
পূজা আয়োজিত হতে থাকে।
প্রথমের দিকে শুধুমাত্র এই ধরনের জমিদার অনেক ধনী পরিবারগুলো এবং রাজ
পরিবার গুলোই শুধু পূজা পালন করতো তবে এটি আস্তে আস্তে গ্রামে গঞ্জে শহর জুড়ে
সকল জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি সামাজিক উৎসব রূপে মানুষের মনে জায়গা করে
নেয় তারপর থেকেই এদের সংস্কৃতির একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে।
এরপর থেকে হিন্দু সংস্কৃতিতে শুরু হয় প্রতিযোগিতা শিল্প এবং সামাজিক সমাবেশের
মাধ্যমে কে কার থেকে এগিয়ে যেতে পারে কে কত বড় মন্দির বানাতে পারে, অথবা কে কত
বড় আয়োজন করতে পারে। হিন্দু ভাইদের জন্য এটি আজকের দিনে শুধুমাত্র এটি শারদীয়
দুর্গাপূজা নয় এটি একটি সাংস্কৃতিক পরিচয় সামাজিক বন্ধন ও আনন্দ উৎসবের প্রতিক
হয়ে উঠেছে।
এতক্ষণ আমি আপনাকে শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি
আর্টিকেলের পরের অংশ আমি আপনাকে জানাবো দেবী দুর্গার বর্ণনা সম্পর্কে বিস্তারিত
তথ্য।
দেবী দুর্গার বর্ণনা
দেবী দুর্গার বর্ণনা টা সাধারণত লিখে বুঝানো টা খুবই মুশকিল। তারপরেও চলুন আমি
আপনাকে লিখে বোঝানোর চেষ্টা করি এবং আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে অবশ্যই
আপনি তা বুঝতে পারবেন বলে আমি আশা করি।
দেবী দুর্গা হিন্দু ধর্মের শক্তির সর্বোত্তম অধিকারী হিসেবে প্রকাশিত। হিন্দু
গ্রন্থ মতে তিনি আদ্যশক্তি মহামায়া এবং দশভূজা রূপে প্রকাশিত হন। তার প্রতিটি হাতেই একটি না একটি দেবতার দান করা অস্ত্র থাকে যা বিভিন্ন ধরনের শক্তির প্রতীক
হিসেবে কাজ করে যেমন চক্র ত্রিশূল সংখ্য খড়গ ধনুক ইত্যাদি ইত্যাদি।
হিন্দু ধর্ম মতে এই দশ হাতে দেবী মানব জাতিকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে
সাহায্য করেন। দেবী দুর্গার অন্যতম একটি বাহন হল সিংহ যা অনেক বেশি হিংস্র সাহস
এবং শক্তি এবং নির্ভীকতার প্রতীক। হিন্দু শাস্ত্র মতে সিংহের ওপর বসে দেবী
মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করেন এবং তার সাথে জয়লাভ করেন। এর জন্য দেবী দুর্গাকে
কেবল ধ্বংস কারি নন তিনি রক্ষা কর্তি হিসাবে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ
সেভেন সিস্টার্স মানে কি ?
আমি আপনাকে জানাচ্ছি শারদীয় দূর্গা পূজার ইতিহাস , দেবী দুর্গার বর্ণনা এবং
দুর্গা পুজার নিয়ম ২০২৫
হিন্দু শাস্ত্র মতে দেবি দুর্গার চারটি প্রধান শক্তি ধারণ করে-
- মহা কালী : এটি ধ্বংস ও সময়ের শক্তি হিসাবে
- মহা লক্ষ্মী : এটি সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্যের শক্তি হিসাবে
- মহা সরস্বতী : এটি জ্ঞান ও বিদ্যার শক্তি হিসাবে
- মহা দুর্গা : এটি সাহস ও সুরক্ষার শক্তি হিসাবে।
দেবী দুর্গা জিনিস স্নেহশীল মাতা হিসেবে ভক্তকে রক্ষা করেন আবার অশুভ শক্তির জন্য
তিনি হয়ে উঠেন সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা। ভক্তদের কাছে দেবী দুর্গা শুধুমাত্র
একটি দেবি নন তিনি কারো কাছে মাতৃত্ব আবার কারো কাছে শক্তি সমৃদ্ধি ও ন্যায়ের
প্রতি হিসেবে কাজ করেন।
আশা করি আপনি দেবী দুর্গার বর্ণনা সম্পূর্ণরূপে বসতে পেরেছেন চলুন আর্টিকেলের
পরের অংশে আমি আপনাকে দূর্গা পূজার নিয়ম সম্পর্কে জানাই
দুর্গা পুজার নিয়ম ২০২৫
দুর্গাপূজা শুধুমাত্র একটি আচার অনুষ্ঠান নয়, এটি অবশ্যই একটি নিয়মের মধ্যে
ভক্তির বহিঃপ্রকাশ। আগের অংশে আমি আপনাকে জানিয়েছি দেবী দুর্গার বর্ণনা
চলুন দুর্গা পুজার নিয়ম ২০২৫ সম্পর্কে আমি আপনাকে জানাই-
সর্বপ্রথম পূজার নিয়মের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো কলস ও ঘট স্থাপন করা।
পূজা শুরুতেই কলস বা গুহাটি স্থাপন করা হয় যে যেটিতে রাখা হয় গঙ্গাজল এবং আম
পাতা এবং নারকেল। দুর্গা পুজার নিয়ম ২০২৫ ।
এরপর হয় বাঁধন মহা ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যাবেলায় গাছের অর্থাৎ বেল গাছের একটি ডালে
দেবী দুর্গার শক্তিকে আহবান করা হয় এটিকে বলা হয় বোধন। এরপরে আসে অষ্টপ্রহরী
পূজা এই পূজাতে বেবি দশভূজা রূপে প্রতিদিন আলাদা আলাদা উপাচার দেওয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ
প্রেমিকার মন জয় করবেন কিভাবে ?
এরপরে অঞ্জলি প্রধান মহা সপ্তমী অষ্টমী ও নবমীতে ভক্তরা দেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি
অর্থাৎ ফুল প্রদান করেন।কুমারী পূজা অষ্টমীর দিনে ছোট কন্যাকে দেবী দুর্গার প্রতি
হিসাবে পূজা করা হয় একে কুমারী পূজা বলে।
দেবিকে বিভিন্ন রকম ভোগ নিবেদন করা হয় খিচুড়ি লুচি ফল মিষ্টান্ন ইত্যাদি এই ভোগ
পরে আবার ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
বিসর্জন সর্বশেষ এবং বিদায়ের মুহূর্ত যা ভক্তদের জন্য একটি কষ্টদায়ক মুহূর্ত
মহা দশমীর দিনে দেবীর প্রতিমা টি বিসর্জন দেওয়া সেইদিন দেবী কৈলাসে প্রত্যাবর্তন
করেন এবং তা প্রত্যাবর্তক দিবসের প্রতিক হিসেবে কাজ করে তবে বিসর্জনের আগে
একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা যেটিকে সিঁদুর খেলা বলা হয় সেটাই খেলা হয় এখানে নারীরা
একে অপরকে দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। আপনাকে জানালাম দুর্গা পুজার নিয়ম
২০২৫ ।
শেষ কথা
এতক্ষণ আমি আপনাকে জানাচ্ছিলাম শারদীয় দুর্গা পূজার ইতিহাস, দেবী দুর্গার বর্ণনা
এবং দুর্গা পুজার নিয়ম ২০২৫ নিয়ে বিস্তারিত ।
আশা করি এ আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন এবং এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি
আপনার মনের ভেতরে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের
সাথে শেয়ার করুন এবং এইরকম তথ্যসম্বলিত ও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে আমাদের
ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url